14.2 C
London
November 2, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশদের ওপর কাজ করছে না হৃদরোগের ওষুধ

হৃদরোগের চিকিৎসায় একটি বহু ব্যবহৃত ওষুধ ব্রিটেনে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের ওপর কম কার্যকরী। ফলে তারা ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের তুলনায় বারবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে থাকছেন।

লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চের সহায়তায় পরিচালিত ওই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিগোষ্ঠী ভেদে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন প্রভাব ফেলে সেটি বোঝার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে এই গবেষণা। সবার জন্য কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ।

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে পরবর্তী হার্টঅ্যাটাক থেকে নিরাপদ রাখতে সাধারণত ক্লোপিডোগ্রেল নামের একটি ওষুধ দেওয়া হয়। এটি প্লাটিলেট রক্ত কণিকাকে একে অপরের সঙ্গে লেগে যাওয়ায় বাধা দেয়। এতে বিপজ্জনকভাবে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমে।

শরীরে ক্লোপিডোগ্রেল কার্যকর হওয়ার জন্য প্রথমে এটি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। ইউরোপীয়দের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের জিনে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটিকে জেনেটিক ভ্যারিয়েন্ট বা জিনের আলাদা ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই জিনগত পরিবর্তনের কারণে CYP2C19 এনজাইম নিঃসৃত হয়, যা ক্লোপিডোগ্রেল সক্রিয় হওয়াকে ব্যাহত করে বা হার কমিয়ে দেয়।

সাধারণত ব্রিটেনে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের হার বেশি। অবশ্য গবেষকেরা যুক্তরাজ্যের সমস্ত দক্ষিণ এশীয়র মধ্যে এ ধরনের জিনগত পরিবর্তনের খোঁজ করেননি।

গবেষকেরা ৪৪ হাজার ৩৯৬ বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি ব্রিটিশ নাগরিকের স্বাস্থ্যগত তথ্যের ওপর জরিপ চালান। অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন লন্ডন ভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম সম্প্রদায়ভিত্তিক জিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিনস অ্যান্ড হেলথ থেকে নেওয়া একই কোহর্টের (একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সম্প্রদায়) সদস্য।

তারা ৫৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে একই জিনগত পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। অর্থাৎ তাদের শরীরে ক্লোপিডোগ্রেল সক্রিয় হতে পারে না। ওই কোহর্টের তিন ভাগের দুই ভাগ ব্রিটিশ দক্ষিণ এশীয়কে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর পরবর্তী অসুস্থতা ঠেকাতে ক্লোপিডোগ্রেল সেবন করতে দেওয়া হয়েছিল।

অংশগ্রহণকারীদের দীর্ঘকালের স্বাস্থ্যগত তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষক দলটি দেখায়, CYP2C19 এনজাইম নিঃসরণকারী দুই ধরনের জিন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বারবার হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে তিনগুন।

গবেষণাটির প্রধান গবেষক ও কুইন ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ইমা ম্যাগাভার্ন বলেন, ‘ক্লোপিডোগ্রেল মূলত ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে। প্রথমবারের মতো আমরা দেখাচ্ছি, যে জেনেটিক ভ্যারিয়েন্টগুলো ক্লোপিডোগ্রেলকে অকার্যকর করে তোলে সেগুলো ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে উপস্থিত। ফলে ক্লোপিডোগ্রেল নিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের আবারও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ গবেষণায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কাদের ক্ষেত্রে ক্লোপিডোগ্রেল কার্যকর তা চিহ্নিত করতে জিন বিদ্যা কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশদের মধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। তাই তাদের অ্যান্টি প্লাটিলেট ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ও ক্লোপিডোগ্রেল চিকিৎসার ব্যর্থতার ঝুঁকি রয়েছে। এ গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে, চিকিৎসা গবেষণায় দক্ষিণ এশীয়দের প্রক্রিয়াগত কম প্রতিনিধিত্ব কীভাবে এ সম্প্রদায়কে ঝুঁকিতে ফেলছে।’

এম.কে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আরো পড়ুন

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকাডুবে ১২ অভিবাসীর মৃত্যু

নতুন সাবস্ক্রাইব ব্যবস্থা চালু করছে স্যোশাল মিডিয়া সাইট এক্স

ভিসা ছাড়াই যে ৪০ দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা