বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের কোনো উন্নতি হয়নি বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস।
গত বছর মার্চে ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১ ডেমোক্রেসি আন্ডার সিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল ফ্রিডম হাউজ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ পয়েন্টের মধ্যে এবার বাংলাদেশের স্কোর ৩৯। অর্থাৎ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এখন ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারে। আগের বছর ২০২০ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৯।
তবে ২০১৯ সালে স্কোর ছিল ৪১, ২০১৮ সালে ৪৫ এবং ২০১৭ সালে ৪৭। ওই সময়েও বাংলাদেশ ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারে ছিল। অর্থাৎ, ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০২০ সালে দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা যেমন ছিল, ২০২১ সালে এসে সেই অবস্থার কোনও রদবদল ঘটেনি।
১৯৫টি দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবছরের মতো এবারের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার, এ দুই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার স্কোর নির্ণয় করা হয়েছে।
দেশ ও অঞ্চলগুলোকে মুক্ত, আংশিক মুক্ত, মুক্ত নয়—এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুক্ত বিভাগে ৮২টি দেশ ও একটি অঞ্চল পড়েছে। আংশিক মুক্ত ৫৯টি দেশ ও একটি অঞ্চল। ৫৪টি দেশ ও ১০টি অঞ্চল এখনও মুক্ত নয়।
এবারের ৩৫ পাতার প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পাতায় গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে আছে মালি, তুরস্ক, তানজানিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়া। পয়েন্টের হিসাবে বাংলাদেশের ২১ পয়েন্ট সংকুচিত হয়েছে।
রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা চালানো ফ্রিডম হাউস তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘মুক্ত নয়’ হিসেবে চিহ্নিত দেশের সংখ্যা ২০০৬ সালের পর এবারই সর্বোচ্চ। এবার ৭৩টি দেশের স্বাধীনতা স্কোর কমেছে, যা বিশ্বব্যাপী ৭৫ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
মূল্যায়নের মোট স্কোর ১০০। এর মধ্যে রাজনৈতিক অধিকারে ৪০ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় ৬০। বাংলাদেশের স্কোর ৪০-এর মধ্যে ১৫ এবং ৬০-এর মধ্যে ২৪। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মোট স্কোর ৩৯।
ফ্রিডম হাউসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের স্কোর সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিরোধী দল, তাদের জোটের শরিক, সমালোচক মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বরকে ধারাবাহিকভাবে হয়রানির মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তি সুসংহত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি একটি মারাত্মক সমস্যা এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং দায়মুক্তির নজিরও আছে। ২০১৬ সাল থেকে দেশে ইসলামি চরমপন্থার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বাড়ানো, সাংবাদিক ও কর্মীদের ভয় দেখানো এবং ভারতে মোদি সরকারের অধীনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হামলা দেশে রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি ঘটিয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
এনএইচ