TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

বিশ্বব্যাপী বৈধ অভিবাসন পথ সংকুচিত হওয়ায় মানুষ পাচার বাড়ছেঃ ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিল

বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোর কড়াকড়ি অভিবাসন নীতি মানুষ পাচারকারীদের জন্য অপ্রত্যাশিত সুবিধা তৈরি করেছে বলে নতুন এক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও রাজনৈতিক স্লোগানে পাচারকারীদের ব্যবসা ভাঙার দাবি করা হলেও বাস্তবে এসব পদক্ষেপ পাচারকারীদের চাহিদা, প্রভাব ও আয়ের সুযোগ বরং বাড়িয়ে দিয়েছে।

ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলের মিক্সড মাইগ্রেশন সেন্টার বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলাচলরত ৮০ হাজারের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের তথ্য দেখায়—তাদের মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসনপথ না থাকায় পাচারকারীদের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই তথ্য সরকারগুলোর “স্ম্যাশ দ্য গ্যাংস”–ধরনের কঠোর প্রচারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

কেন্দ্রটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রবার্তো ফরিন বলেন, সরকারি ভাষ্য ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ধরনের বৈপরীত্য রয়েছে। “সরকারগুলো পাচারকারীদের ব্যবসা নষ্ট করতে চায় বলে দাবি করে, কিন্তু আমাদের তথ্য বলছে—উল্টো তাদের ব্যবসাই ফুলে-ফেঁপে উঠছে,” বলেন তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার ৪৫৮ পাচারকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যাদের অনেকেই জানান সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ার ফলে তাদের সেবার চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। বিশেষ করে সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুটে ১০২ পাচারকারীর ৪৪% বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন কমলেও তাদের গ্রাহক বাড়ছে—কারণ পথ কঠিন হওয়ায় অভিবাসীরা আরও বেশি পাচারকারীদের ওপর নির্ভর করছেন।

অন্যদিকে, ৫৭% পাচারকারী জানিয়েছেন তারা তাদের ফি বাড়িয়েছেন। তাদের ৭৮% বলেন, কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে ঝুঁকি বাড়ায় দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই। এতে পাচারকারীদের লাভ যেমন বাড়ছে, তেমনি বিপদের মুখে পড়ছেন অভিবাসীরাও।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো—পাচারকারীদের প্রায় অর্ধেক, ৪৯%, স্বীকার করেছেন তারা সীমান্তরক্ষী, পুলিশ বা আটককেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং অনেকে এই যোগাযোগকে পাচারের কাজে ব্যবহার করেন। অর্থাৎ, পাচার প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাই অনেক ক্ষেত্রে পাচারকে সুবিধা দিচ্ছেন।

সাধারণ ধারণার বিপরীতে গবেষণা বলছে—মাইগ্রান্টদের সিদ্ধান্তে পাচারকারীদের প্রভাব খুব সামান্য। জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ৬% অভিবাসী বলেছেন পাচারকারীরা তাদের সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে। বরং পরিবার বা বন্ধুরা এবং অভিবাসীদের নিজস্ব সিদ্ধান্তই ছিল প্রভাবশালী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংঘাত, দমন-পীড়ন, স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা ও দীর্ঘ ঝুঁকিপূর্ণ পথে যাত্রা করতে হওয়া মানুষই পাচারকারীদের বেশি ব্যবহার করেন। ফলে পাচারকারীরা অনিয়মিত অভিবাসনের কারণ নয়—বরং নিরাপদ, সহজ ও আইনি অভিবাসন পথে প্রবেশাধিকার সঙ্কুচিত হওয়াই মানুষকে বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে।

ইউরোপসহ বহু অঞ্চলে পরিবার পুনর্মিলন ও অন্যান্য বৈধ অভিবাসন পথ সীমিত হয়ে যাওয়ায় মানুষ পাচারকারীদের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে বলে মানবাধিকারকর্মীরাও দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করছেন। ফরিন বলেন, “যখন বৈধ পথ কমে যায়, পাচারকারীরা শক্তিশালী হয়। নীতিনির্ধারকরা যদি কারণ দূর না করেন, তারা নিজেরাই পাচারের নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করছেন।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীর বয়স মূল্যায়নে সমাজকর্মীদের কাজ করা উচিত নয়: বৃটিশ পেশাদার সংস্থা ;

£৫.৫ বিলিয়ন বিটকয়েন জালিয়াতিঃ লন্ডনে লুকিয়ে থাকা প্রতারকের কারাদণ্ড

লন্ডনে স্ত্রীকে হত্যাঃ বাংলাদেশি যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নিউজ ডেস্ক