6.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

ব্রিটিশ আটককেন্দ্রে নির্যাতন ও বর্ণবাদের শিকার অভিবাসীরা

ব্রিটেনের সরকারি অভিবাসী আটককেন্দ্রে ডিপোর্ট বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের ওপর শারিরীক নির্যাতন ও বর্ণবাদী আচরণ করা হয় বলে একটি তদন্তে উঠে এসেছে৷ ‘কারাগারের মতো’ এসব আটককেন্দ্রে কোনো অভিবাসীকে ২৮ দিনের বেশি সময় না রাখারও জোর সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে৷

তদন্ত দলের প্রধান কেট ইভস বলেন, লন্ডনের দক্ষিণে গ্যাটউইক বিমানবন্দরের কাছে ব্রুক হাউস ইমিগ্রেশন রিমুভাল সেন্টারে অভিবাসীদের সঙ্গে ‘ভয়ঙ্কর আচরণ’ করা হয়েছে৷

ইভস বলেন, এই অভিবাসী আটককেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা এক ধরনের ‘বিষাক্ত সংস্কৃতি’ গড়ে তুলেছেন৷ ফলে, সেখানে অবস্থানরত অভিবাসীদের বর্ণবাদী আলাপ, অবমাননাকর ভাষা, অমানিবক মন্তব্য শুনতে হয়৷ একইসঙ্গে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ বা শারিরীক নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এসব ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল, একজন অভিবাসী যখন ঘাড় ব্যথা নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন, তখন ব্যথার স্থানে তাকে চাপ দিয়ে ধরা হয়৷’’

এর আগে দেয়া সংস্কার প্রস্তাবের আহ্বানও সরকার উপেক্ষা করেছে বলে উল্লেখ করেন ইভস৷ সংস্কার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করতে আবারও কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি৷

ব্রুক হাউস এবং অভিবাসন আটককেন্দ্রের সংস্কৃতি পরিবর্তনে সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে রাখা ৩৩টি সুপারিশের মধ্যে, ২৮ দিনের বেশি কাউকে আটক না রাখার বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছেন তদন্তকারী দল৷ কারণ, যুক্তরাজ্যের সাতটি অভিবাসী অপসারণ কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার অভিবাসী নিজ দেশের ফেরত পাঠানো বা যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন৷

কিন্তু যুক্তরাজ্য ইউরোপের একমাত্র দেশ, যেখানে একজন অভিবাসীকে কত দিন আটকে রাখা যেতে পারে তার কোনো সীমারেখা নেই৷ অথচ যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে কাউকে ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানো না গেলে, তাকে আটকে রাখা সাধারণত বেআইনি৷

২০১৭ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম একটি প্রামাণ্যচিত্রে ব্রুক হাউসের আটককেন্দ্রটিতে অভিবাসীদের প্রতি অকথ্য ব্যবহারের গোপন ফুটেজ তুলে ধরে৷ তার দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে কেট ইভসের নেতৃত্বে এই তদন্তটি শুরু হয়৷

যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান স্বীকার করেছেন যে ‘‘আটকে থাকা অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনায় এবং সামগ্রিকভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ছিল৷’’

এই প্রতিবেদনের ফলাফলকে যুক্তরাজ্য সরকার ‘সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করবে’ বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷

এদিকে, এনজিও শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেছেন, ‘‘তদন্তে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে হোম অফিস আটকে রাখা অভিবাসীদের ন্যূনতম যত্ন এবং মানবতা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়৷’’

ব্রিটিশ হোম অফিস অর্থাৎ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শেষ ১২ মাসে অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৭৬৮ জন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ আগের ১২ মাসের তুলনায় যা অন্তত ১৯ শতাংশ বেশি৷

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার৷ আর নির্ভরশীলদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেই সংখ্যাটি হয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৭৷ গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছিলেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই এই ব্যাকলগ শেষ করতে চান তিনি৷

কারণ, আগামী বছর যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচন৷ তার আগেই অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছেন রক্ষণশীল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷

এম.কে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আরো পড়ুন

ডিবি প্রধানের ভাতের হোটেলের উপর নাখোশ প্রধানমন্ত্রী, হতে পারেন বদলি

নিউজ ডেস্ক

টিকার দাবিতে প্রবাসীদের বিক্ষোভ

বেতন বৃদ্ধির পরেও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে তাল মিলাতে ব্যর্থ ব্রিটিশ জনগণ