15.7 C
London
July 21, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটিশ ডানপন্থী রাজনীতিতে ভূমিকম্প, রিফর্মে চলছে গোপন রিক্রুটমেন্ট অভিযান

রিফর্ম ইউকে আনুষ্ঠানিকভাবে কনজারভেটিভ দল থেকে নেতা দলে টানার কোনও পরিকল্পনা অস্বীকার করলেও, বাস্তবতার চিত্র বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত বছরের GB News-এর বড়দিনের পার্টিতেই স্পষ্ট হয়েছিল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানকে ঘিরে দলবদলের জোর গুঞ্জন ছিল।

এই গুঞ্জন জোর পায় যখন জানা যায় তার স্বামী রায়েল ব্রাভারম্যান ইতোমধ্যেই রিফর্ম ইউকে-তে যোগ দিয়েছেন। দলের ভেতরের এক সদস্য বলেন, “আমরা ধরে নিয়েছিলাম, সে কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে।”

রিফর্ম দল একটি অনলাইন “ডিফেকশন পোর্টাল” চালু করেছে, যেখানে আগ্রহী টোরি সদস্যদের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে। তবে বাস্তবে, নাইজেল ফারাজ, রিচার্ড টাইস ও অন্য শীর্ষ নেতারা ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে টোরিদের দলে টানার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই ‘হেডহান্টিং’-এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে সাবেক টোরি চেয়ার স্যার জেক বেরি, সাবেক মন্ত্রী ডেভিড জোনস, আন্দ্রেয়া জেনকিনস এবং মার্কো লংগি রিফর্মে যোগ দিয়েছেন।

তবে সুয়েলা ব্রাভারম্যান, জ্যাকব রিস-মগ ও লিজ ট্রাস এখনো এই দলে যোগ দেননি। ব্রাভারম্যানকে ঘিরে ধৈর্য হারাতে শুরু করেছে রিফর্ম, এবং সাম্প্রতিক আফগান পুনর্বাসন তথ্য ফাঁস ইস্যুতে তার বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা শুরু করেছে দলটি।

জিয়া ইউসুফ, রিফর্মের ব্যয় হ্রাস বিষয়ক প্রধান, ব্রাভারম্যান ও রবার্ট জেনরিককে সরাসরি অভিযুক্ত করে বলেন, “সংসদে না বলে চুপ থাকা ছিল বিশ্বাসঘাতকতা।” এর প্রতিবাদে রায়েল ব্রাভারম্যান রিফর্ম থেকে পদত্যাগ করেন।

ব্রাভারম্যান পরে জানান, তিনি আদালতের সুপারইনজাংশনের কারণে কিছু বলার অধিকার রাখেননি। তবে রিফর্মের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তারা এখন ব্রাভারম্যানকে আর ‘দলীয় সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করছে না।

রিফর্মের নেতারা বলছেন, অনেক প্রাক্তন টোরি এমপি এখন রিফর্মে যোগ দিতে চাইছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই পুরনো পদ ও শর্ত চাচ্ছেন, যা দল মেনে নিচ্ছে না।

এদিকে লিজ ট্রাসের দলবদলের সম্ভাবনা রিফর্মের অনেকেই ‘অসম্ভব’ বলে মনে করেন। তার অতীতকে ‘টক্সিক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ফারাজের ঘনিষ্ঠরা।

অন্যদিকে, জ্যাকব রিস-মগকে ঘিরে দলবদলের গুঞ্জন এখনো জোরালো। যদিও তিনি প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছেন, তবে দলের অনেকে বিশ্বাস করেন, ড্যান নরিসের কারণে উপনির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি রিফর্মের প্রার্থী হতে পারেন।

রিফর্ম দলের ‘ডিসিপ্লিন ও ডিফেকশন’ প্রধান টম ওয়াটারহাউস নেতৃত্ব দিচ্ছেন সম্ভাব্য দলবদলকারীদের যাচাই প্রক্রিয়ায়। ফারাজের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, “আমরা পুরনো টোরিদের দিয়ে নতুন রিফর্ম তৈরি করব না, বরং সফল, গুণগতমানসম্পন্ন নতুন নেতৃত্ব তুলে আনব।”

তবে অভ্যন্তরীণভাবে রিফর্ম এখন নানা চাপে—একদিকে দলবদল, অন্যদিকে ফারাজের সাবেক ডেপুটি বেন হাবিব ও রুপার্ট লোর মতো নেতা নিজেদের ডানপন্থী দল গঠনের উদ্যোগে রয়েছেন, যার ফলে রিফর্মের একাংশ বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

সাবেক টোরি মন্ত্রী ডেভিড জোনস, যিনি দুই সপ্তাহ আগে রিফর্মে যোগ দেন, বলেন, “আমি দলত্যাগ করেছি নিজের বিবেচনায়। দীর্ঘ সময় ধরে নিজের দলের কার্যক্রমে আমি হতাশ ছিলাম।”

তবে দলবদলের এই ঢেউ, রিফর্মকে আরও শক্তিশালী করলেও, কনজারভেটিভদের ভাঙনের রাজনীতি কী পরিণতির দিকে যাবে, তা নিয়েই এখন যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২০ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

অবৈধ অভিবাসীদের দমন অভিযান জোরদারঃ পুলিশের ক্ষমতা পাচ্ছেন ইমিগ্রেশন অফিসাররা

ব্রিটেনে বেড়েছে চাকরির সুযোগ

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের পুলিশ বিভাগ নিয়ে নতুন অভিযোগে আক্রান্ত শেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারেরা