ব্রিটেনের দুটি দাতব্য সংস্থা—কাসনার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট (KCT) এবং ইউকে তোরেমেট—অধিকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ ইসরায়েলি বসতি সাসিয়ায় একটি ধর্মীয় স্কুলে প্রায় ৫.৭ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান পাঠিয়েছে। এই অনুদান চ্যারিটি কমিশনের অনুমোদনসাপেক্ষে প্রদান করা হয়েছে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
বনে আকিভা ইয়েশিভা হাই স্কুলে এই বিপুল অর্থ যাওয়ার ফলে স্কুলটির আকার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং সাসিয়া বসতির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েলি বসতি বিশেষজ্ঞ ড্রোর এটকেস বলেন, এই স্কুল বসতির অস্তিত্বের অন্যতম প্রধান ভিত্তি ও কর্মসংস্থানের বৃহৎ উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাসিয়া বসতিটি ১৯৮৩ সালে গঠিত হয়, যেখানে আগে থেকেই ফিলিস্তিনি গ্রাম খিরবেত সাসিয়া অবস্থিত ছিল। ১৯৮৬ সালে ইসরায়েল সরকার গ্রামটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘোষণা করে মূল ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে। এই ঘটনার সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ।
২০২৫ সালের মার্চে এই সাসিয়া বসতিতে অবস্থিত চলচ্চিত্র পরিচালক হামদান বল্লালের বাড়িতে বসতিবাসীরা হামলা চালায়। বল্লাল অস্কার বিজয়ী ডকুমেন্টারি “নো আদার ল্যান্ড”-এর পরিচালকদলের সদস্য।
২০১৬ সালে চ্যারিটি কমিশন ইউকে তোরেমেটকে জানায় যে, অধিকৃত অঞ্চলের একটি স্কুলে অনুদান শিক্ষা খাতে উন্নয়নের অংশ হিসেবে বৈধ ধরা হবে। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অনুদানগুলো প্রদান করা হয় ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে।
সাবেক কনজারভেটিভ পার্টি চেয়ার সাঈদা ওয়ারসি বলেন, করদাতাদের অর্থ দিয়ে অবৈধ বসতিতে অনুদান দেওয়া অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য এবং এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, চ্যারিটি কমিশন এমন অনুদানে সম্মতি দিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে।
লেবার এমপি অ্যান্ডি ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এমন অনুদান চ্যারিটি স্ট্যাটাস বাতিলের জন্য যথেষ্ট এবং তা ব্যক্তিগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া উচিত। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান।
আইন সংস্থা হিকম্যান অ্যান্ড রোজ ২০২২ সালে কমিশনের কাছে এই অনুদানের বিষয়ে উদ্বেগ জানায়। কমিশন জানায়, এটি তাদের নিয়ন্ত্রক এখতিয়ারের বাইরে এবং তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে, পুলিশের কাউন্টার-টেররিজম ইউনিট SO15 তদন্ত শুরু না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তারা বিষয়টি চ্যারিটি কমিশনের নজরে আনবে বলে জানায়।
চ্যারিটি কমিশন জানায়, অধিকৃত অঞ্চলে কোনো দাতব্য সংস্থা কাজ করলেই তা অপরাধ নয়। তারা আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ করছে এবং আইনি কাঠামোর মধ্যেই কাজ করছে।
ইউকে তোরেমেট জানায়, তাদের অনুদান কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয় এবং তা ইংলিশ চ্যারিটি আইনের আওতায় বৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে। কাসনার ট্রাস্টের এক মুখপাত্র বলেন, অনুদানটি একটি ধর্মীয় স্কুলের জন্য, বসতি সম্প্রসারণের জন্য নয়, এবং চ্যারিটি কমিশন এই অনুদান অনুমোদন করেছে।
এই ঘটনা ব্রিটেনের দাতব্য খাতের নৈতিকতা, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রশ্নে গুরুতর বিতর্ক তৈরি করেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ জুলাই ২০২৫