দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাববলয় দীর্ঘদিনের হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় নেপাল ও বাংলাদেশের চীনের দিকে ঝোঁক বাড়ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতের ‘বড় ভাই’সুলভ দাদাগিরি কূটনীতি প্রতিবেশী দেশগুলোকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে এবং বেইজিংকে আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি নেপালে জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে দুর্নীতি ও বেকারত্ববিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন এনেছে। এর জেরে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। একই সঙ্গে সংসদ ভেঙে মার্চে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্রুত অভিনন্দন জানালেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—এ উদ্যোগ যেন ‘হস্তক্ষেপমূলক’ না শোনায়। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষক ডি বি সুবেদির মতে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য স্থিতিশীল নেপাল অপরিহার্য। তবে অতীতে ভারতের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ, যেমন ২০১৫ সালের অবরোধ, নেপালকে চীনের ঘনিষ্ঠ করেছে।
বাংলাদেশেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং তার পরবর্তী সময়ে দিল্লি গমনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বেইজিং সফরের পর বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। ভারতের আশঙ্কা, সীমান্তঘেঁষা লালমনিরহাটে চীন সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারে, যা শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
চায়না অ্যান্ড এশিয়া থিংকট্যাংকের গবেষক ওমকার ভোলে বলেন, নেপালের সংকট চীনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বাড়িয়েছে। তার মতে, ভারতের উচিত দুর্নীতি ও বেকারত্ব মোকাবিলায় নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে সহায়তা করা, যাতে জনগণের আস্থা বজায় থাকে।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের শিবম শিখাওয়াতও মনে করেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে উন্নয়ন সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করা জরুরি। কেবল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নয়, বরং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হচ্ছে। নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চীনমুখী ঝোঁক দিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ। তাই ভারতের উচিত দাদাগিরি নয়, বরং ধারাবাহিক ও গঠনমূলক কূটনীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশীর মতো আচরণ করলে সম্পর্ক মজবুত হবে, নচেৎ চীনের প্রভাবই আরও শক্তিশালী হবে।
সূত্রঃ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
এম.কে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫