2.7 C
London
January 20, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ভাসমান আশ্রয়কেন্দ্র বিবি স্টকহোম ছাড়লেন শেষ আশ্রয়প্রার্থীরাও

যুক্তরাজ্যের ডরসেটের পোর্টল্যান্ডে নোঙ্গর করা ভাসমান আশ্রয়কেন্দ্র বিবি স্টকহোম নামের বার্জে রাখা শেষ আশ্রয়প্রার্থীদেরও সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ মঙ্গলবার তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ৷ বুধবার বার্জের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা কর্মীদেরও এটি ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে৷

সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি বিতর্কিত এই আশ্রয়কেন্দ্রটিকে একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকার৷

পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার জন্য বার্জটিকে বসবাস উপযোগী করেছিল দেশটির আগের কনজারভেটিভ সরকার৷ কিন্তু লেবার পার্টির সরকার ক্ষমতায় এসে সেই চুক্তি বাতিল করে দেয়৷ ফলে, বার্জটিতে যে যুক্তরাজ্য সরকার অবকাঠামো যেসব উন্নয়ন করেছে, তা এখন ভেঙে ফেলা হবে৷

মঙ্গলবার দিন আশ্রয়প্রার্থীদের সরিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ মাসের গল্পের সমাপ্তি হলো৷ এই বার্জকে ঘিরে ছিল আলোচনা, সমালোচনা, আন্দোলন, গ্রেপ্তার এবং অধিকার সংস্থাগুলোর নিন্দা৷

গত বছর আলবেনিয়া থেকে আসা লিওনার্ড ফারুকু নামের একজন আশ্রয়প্রার্থী এই বার্জে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷

বিবি স্টকহোমে যাদের রাখা হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই বেশ কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে ছিলেন৷ এ নিয়ে তাদের দুই বা তিনটি ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত করা হলো৷

দক্ষিণ ডরসেটের লেবার পার্টির স্থানীয় এমপি লয়ড হ্যাটন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ কারণ তিনি আগে এই বার্জ ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ‘‘একটি ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর কৌশল’’ বলে অভিহিত করেছিলেন৷

হোম অফিস বা যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দল বার্জে থাকা চারশ আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তি করেছে৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগ আবেদনকারীর আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হয়েছে বলে অনুমান করা যাচ্ছে৷ যাদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হয়েছে তাদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা হতে পারে৷ মঙ্গলবার যখন সবশেষ আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও বার্জটিতে আট জন ছিলেন৷ তাদের সবাই আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷

স্থানীয় কাউন্সিল জানিয়েছে, জাহাজ থেকে সরিয়ে নেয়া কোনো আশ্রয়প্রার্থীকেই ডরসেটের অন্য বাসস্থানে রাখা হবে না৷ ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কার্ডিফ এবং উলভারহ্যাম্পটনসহ অন্যান্য এলাকায় স্থানান্তরিত করা হতে পারে৷

আগামী বছরের ৮ জানুয়ারির বার্জটিকে তার মালিকপক্ষ বিবি মেরিন-এর কাছে হস্তান্তর করা হবে৷ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে করা চুক্তির মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলে এটি ডরসেটের বন্দর থেকে নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবে৷

হোম অফিস জুলাইয়ে জানিয়েছিল, বিবি স্টকহোমের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে পরবর্তী ১০ বছরে আশ্রয় খরচ বাবদ সাতশ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড সাশ্রয় হবে৷ আর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলে, পরের বছরের জন্য খরচ বাড়বে অন্তত ২ কোটি পাউন্ড৷

লেবার পার্টির এমপি লয়ড হ্যাটন বলেন, ‘‘আমি এই খবরটিকে স্বাগত জানাই৷ হোম অফিস বিবি স্টকহোম বার্জের সব আশ্রয় আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করেছে৷ তারা নভেম্বরের শেষ নাগাদ বার্জটি খালি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘শুরু থেকেই আমরা জানতাম, এই বার্জটি একটি ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর কৌশল৷ আগের সরকার এই অপচয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ এটি বন্ধ করে আমরা করদাতাদের অর্থ রক্ষা করছি৷’’

গত বছর প্রথমবারের মতো আশ্রয়প্রার্থীদের বার্জে নিয়ে আসে যুক্তরাজ্য সরকার৷ কারণ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির সরকার অর্থ সাশ্রয়ে হোটেলের বিকল্প খুঁজছিল৷ কিন্তু অধিকার সংস্থাগুলো সুনাক সরকারের এই সিদ্ধান্তটিরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি৷

এমনকি ফায়ার ব্রিগেড ইউনিয়নেরর পক্ষ থেকেও উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছিল, সম্ভাব্য ভিড় এবং উপযুক্ত অগ্নি নির্গমনের সুযোগ না থাকায় বার্জটি ‘মৃত্যুফাঁদ’ হয়ে উঠতে পারে৷

গত বছরের আগস্টের শুরুতে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রথম দলটিকে বিবি স্টকহোমে নিয়ে আসা হয়৷ কিন্তু পানিতে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিলে তাদের আবারও সরিয়ে নেয়া হয়৷

অক্টোবরে যখন আশ্রয়প্রার্থীদের আবার জাহাজে নিয়ে আসা হয় তখন এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা হয়েছিল৷ যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের আগে অর্থাৎ চলতি বছরের মে মাসে পুলিশ দক্ষিণ লন্ডনের পেকহামের একটি হোটেলের কাছে রাস্তা অবরোধ করার পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে আটক করেছিল পুলিশ৷

এই বার্জটিতে শেষ পর্যন্ত চারশ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ কিন্তু লেবার পার্টি ক্ষমতা নেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সরকারের মন্ত্রীরা বলেছিলেন, চুক্তি শেষ হওয়ার পরে এটি আর ব্যবহার করা হবে না৷

বিবি স্টকহোম মূলত একটি ইঞ্জিনবিহীন বিশেষ আবাসন জাহাজ৷ এর আগে তেল শ্রমিকদের রাখা হতো৷ যুক্তরাজ্যের বাইরেও আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার জন্য ওই বার্জটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল৷

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মন্তব্যের জন্য হোম অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, এই প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত তাদের দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২৯ নভেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের অমানবিক জীবনযাপন

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন আইনে পরিবর্তন

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে সপ্তাহ জোরে ট্রেন লাইন ধর্মঘটের ডাক

নিউজ ডেস্ক