ভুল হোম অফিস ডেটায় ভাতা স্থগিত, প্রকৃত জালিয়াতি মাত্র ৪.৩ শতাংশঃ
যুক্তরাজ্যের কর ও রাজস্ব বিভাগ HMRC শিশু ভাতা জালিয়াতি দমনের নামে যে অভিযান চালায়, তাতে ভয়াবহ ভুলের মাত্রা সামনে এসেছে। সংসদীয় এক লিখিত উত্তরে সরকার স্বীকার করেছে, অভিযানে টার্গেট হওয়া অভিভাবকদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশই ছিলেন সম্পূর্ণ বৈধ দাবিদার। মোট ২৩,৭৯৪টি মামলার মধ্যে ১৪,৯৯৪টি ক্ষেত্রে পরবর্তীতে নিশ্চিত হয়েছে যে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো যুক্তরাজ্যেই বসবাস করছিল এবং আইন অনুযায়ী শিশু ভাতার যোগ্য ছিল। অথচ পুরো অভিযানের লক্ষ্য ছিল বিদেশে বসে ভাতা নেওয়া জালিয়াতদের শনাক্ত করা।
আগের স্বীকারোক্তির চার গুণ বেশি ভুল, সংসদে তীব্র প্রতিক্রিয়াঃ
এর আগে HMRC জানিয়েছিল মাত্র ৩,৬৭৩টি ক্ষেত্রে ভুল হয়েছিল। নতুন তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা চার গুণেরও বেশি। কনজারভেটিভ এমপি অ্যান্ড্রু স্নোডেন বিষয়টিকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” আখ্যা দিয়ে বলেন, অভিযানে ধরা পড়া পরিবারগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নির্দোষ। তার ভাষায়, শিশু ভাতার ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর কাছ থেকে কোনো দোষ ছাড়াই এই অর্থ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
ভ্রমণই করেননি, তবুও দেশ ছাড়ার অভিযোগে ভাতা বন্ধঃ
ডিটেইল ও গার্ডিয়ানের যৌথ অনুসন্ধানে উঠে আসে, HMRC সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হোম অফিসের অসম্পূর্ণ ও যাচাইহীন ভ্রমণ তথ্যের ভিত্তিতে। ছুটিতে গিয়ে ডাবলিন বিমানবন্দর দিয়ে ফেরার পর বহু অভিভাবকের ভাতা বন্ধ করা হয়। এমনকি কেউ কেউ আদৌ ভ্রমণ করেননি, কারও ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল, কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন—তবুও তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে বসবাসের অভিযোগ আনা হয়। ইস্ট ইয়র্কশায়ারের এক শিশু পরিচর্যাকারী জানান, তিনি কখনো দেশ ছাড়েননি এবং পাসপোর্টও নেই, তবুও স্পেনে গিয়ে না ফেরার অভিযোগে তার ভাতা বন্ধ করা হয়েছিল।
ডেটা সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন, অভিযান আপাতত স্থগিতঃ
ওপেন রাইটস গ্রুপসহ বিভিন্ন অধিকার সংগঠন HMRC-এর ডেটা ব্যবহারের বৈধতা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তারা জানতে চেয়েছে, ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও কেন জাতীয় পর্যায়ে এই ব্যবস্থা চালু করা হলো এবং কেন পাইলট প্রকল্পে থাকা PAYE যাচাই বাদ দেওয়া হয়। সরকার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে হোম অফিসের ভ্রমণ তথ্য ব্যবহার করে নতুন কোনো শিশু ভাতা তদন্ত শুরু করা হয়নি এবং আগের প্রায় ২৩,৫০০ মামলার পর্যালোচনাতেই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে, তীব্র সমালোচনার মুখে এই বিতর্কিত অভিযান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

