13.4 C
London
December 18, 2024
TV3 BANGLA
মধ্যপ্রাচ্য

মক্কায় বৃষ্টির পর পাথরের পাহাড়ে সবুজের সমারোহ

সৌদি আরবের অবস্থিত দুই পবিত্র নগরী মক্কা এবং মদিনা। মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরীফ ও এর আশপাশে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। বৃষ্টির প্রভাবে মরুভূমির পাহাড়ে সবুজ গাছপালা বেড়ে উঠেছে। দেশটির মরুভূমির ধূসর পাহাড়গুলো সবুজ হয়ে গেছে। সবুজ গাছ, ঘাস ও লতাপাতায় ছেয়ে গেছে মরুর পাহাড়। গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নতুন করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সৌদি আরবে অর্থাৎ মক্কা-মদিনার পাহাড়-পর্বতের অবিশ্বাস্য এসব ছবি নজিরবিহীন। সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজি (এনসিএম) জানিয়েছে, দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ার পর এমন হয়েছে। যা আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি, ঠিক তাই ঘটছে সৌদিতে।

এদিকে এসব এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গাছপালা বাড়তে শুরু করলেও মরুময় দেশটিকে সবুজে ভরিয়ে তোলার উদ্যোগ আরো আগেই নিয়েছিল সৌদি সরকার। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প শুরু করেছে তারা। এর একটি হলো গ্রিন রিয়াদ প্রকল্প। বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে ও স্থানীয় পরিবেশ বিবেচনায় এ প্রকল্পের নকশা করা হয়েছে। এর আওতায় সৌদির রাজধানীতে ১২০টির বেশি আবাসিক এলাকায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে।

গ্রিন রিয়াদ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আবাসিক এলাকায় পার্ক নির্মাণ, রাস্তা, ফুটপাতের পাশে গাছ লাগানো, মসজিদ ও স্কুলের চারপাশে গাছ লাগানো, পার্কিং লটে গাছ লাগানো, বড় পার্ক নির্মাণ এবং উপত্যকা এলাকাগুলোতে গাছ লাগানো। এ প্রকল্পে রিয়াদ জুড়ে অন্তত ৭৫ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সেখানে সবুজাবৃত এলাকার পরিমাণ ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করা এবং মাথাপিছু সবুজ এলাকা ১ দশমিক ৭ বর্গমিটার থেকে বাড়িয়ে ২৮ বর্গমিটার করা হবে। গ্রিন রিয়াদ প্রকল্পে আগামী ১০ বছরে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করবে সৌদি সরকার। এর মাধ্যমে ৩ হাজার ৩০০টি নতুন পার্ক ও বাগান তৈরি করা হবে। এটি ঐ অঞ্চলের বাতাসের মান বাড়াতে এবং তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে সৌদি আরবে সবুজায়নের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হলো সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভ (এসজিআই)। এর আওতায় দেশব্যাপী ১ হাজার কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ প্রকল্পের সূচনা করেন। সেই থেকে প্রকল্পটির আওতায় সৌদি আরব জুড়ে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ গাছই লাগানো হয়েছে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলগুলোতে। এছাড়া এক বছরে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ৬০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল।

এসজিআইর পরিকল্পনা অনুসারে, সৌদি আরবে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৬৫ কোটি গাছ লাগানো হবে। উদ্ধার করা হবে অন্তত ৮০ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল। এর ফলে প্রতি বছর ২০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দার কিছু অংশের মরুভূমিতে গাছপালা বাড়ছে। সম্প্রতি কিছু ছবিতে দেখা গেছে, সৌদির কিছু অঞ্চলের পাহাড়-পর্বতে সবুজের সমারোহ। এসব এলাকা মরু অঞ্চলের অন্তর্গত।
মরু অঞ্চলের এই পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিশ্লেষণ। মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা নতুন বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আর এ বৃষ্টির কারণে দেশটির পূর্বাঞ্চলের মরুভূমির ধূসর পাহাড়গুলো রূপ নিয়েছে সবুজ রঙে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুষ্ক মরুভূমি সবুজ রঙে বদলে যাওয়া বেশ আলোড়ন তুলেছে। বিরল এই দৃশ্য বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মাঝে। স্থানীয়রাও উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই পরিবর্তন। বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে গাছপালা জন্মানোর ঘটনাকে ঐতিহাসিক ও বিরল বলছেন বিশ্লেষকরা। জানিয়েছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবেই মরু অঞ্চলের এমন পরিবর্তন।

সূত্রঃ খালিজ টাইমস

এম.কে
২২ এপ্রিল ২০২৪

 

 

আরো পড়ুন

কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর ফলই কি পাচ্ছে দুবাই

সপ্তাহে ৩ দিন ছুটি ঘোষণা সৌদি কোম্পানির

অবৈধ ২৫০০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে আরব আমিরাত