13.2 C
London
May 19, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

মার্কিন ভিসা পেতে দিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে হলে এখন থেকে আবেদনকারীদের তাদের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রদান করতে হবে। এই নতুন নিয়ম ভিসা প্রক্রিয়াকে আরো কঠোর করেছে ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

টোকিও উইকেন্ডার এবং আরব নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আবেদনকারীদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য। নতুন নীতি অনুযায়ী, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চান, তাদের ভিসা আবেদন ফরমে তাদের ব্যবহৃত সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর নাম ও আইডি উল্লেখ করতে হবে। এর মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এবং অন্যান্য জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম অন্তর্ভুক্ত।

মার্কিন সরকার বলছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পারবে। তবে, এই নিয়ম নিয়ে সমালোচনাও কম নয়।

সমালোচকরা বলছেন, এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন। সামাজিক মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, রাজনৈতিক মতামত এবং যোগাযোগের তথ্য থাকে, যা সরকারের হাতে চলে গেলে অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে, ভিন্ন মতাবলম্বী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এতে বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন। তাদের আশঙ্কা, সরকার এই তথ্য ব্যবহার করে তাদের হয়রানি করতে পারে বা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিতে পারে।

এই নিয়মের ফলে সাংবাদিকদের এবং মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, এর ফলে তাদের কাজ কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, তাদের সূত্র এবং সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। অনেক সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী তাদের কাজ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন। এই তথ্য সরকারের হাতে গেলে তাদের জীবন এবং কাজ উভয়ই বিপন্ন হতে পারে।

মার্কিন সরকার অবশ্য বলছে, তারা এই তথ্য খুব সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করবে। তারা আরো বলছে, এই তথ্য শুধুমাত্র জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে, সমালোচকরা সরকারের এই আশ্বাসে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না।

তাদের মতে, সরকারের কাছে এত বিশাল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্য থাকলে তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। এদিকে, অনেক দেশ এই নতুন নিয়মের বিরোধিতা করেছে। তারা মনে করে, এটি তাদের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ মার্কিন সরকারের কাছে এই নিয়ম পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের এমন ব্যাপক সংগ্রহ অগ্রহণযোগ্য। এই নতুন নিয়ম শুধু ভিসা আবেদনকারীদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এটি দেখায় যে সরকারগুলো কীভাবে ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে।

ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেক দেশ একই পথে হাঁটবে, যা বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তাকে আরো সংকুচিত করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দেশ মনে করে, এটি তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। তারা আশঙ্কা করছে, মার্কিন সরকার এই তথ্য ব্যবহার করে তাদের নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যমের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়। এটি একদিকে যেমন জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলছে, অন্যদিকে তেমনি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।

এম.কে
১৯ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

সহকর্মীর গুলিতে ইসরায়েলি ২০ সেনা নিহত

কিমের হাতে বন্দি তার স্ত্রী’ও

পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ত্রুটি: অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়া ডাচ জাহাজে টাইফয়েড সংক্রমণ