ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য অভিবাসীদের ছোট নৌকা ব্যবহার করার চিত্র আবারও সামনে এসেছে। ফ্রান্সের উপকূলে বৃহস্পতিবার সকালে ডজনখানেক অভিবাসীকে ডিঙি নৌকায় উঠতে দেখা যায়, যারা জল ঠেলে দৌড়ে এসে নৌকায় উঠে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি ছিল না।
জাতিসংঘের নতুন রিপোর্ট বলছে, এই শতাব্দীতে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বাড়বে যুক্তরাজ্যে, যার পেছনে প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে অভিবাসন — বৈধ ও অবৈধ উভয়ই। অনুমান অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে ব্রিটেনের জনসংখ্যা ৬৯.৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭৪.৩ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
লেবার সরকার অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় চাপে রয়েছে। ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ২২,০০০ এর বেশি অভিবাসী ইংল্যান্ডে পৌঁছেছে ছোট নৌকায় করে। গত ১২ মাসে মোট আগতের সংখ্যা ৪৪,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ-এর সঙ্গে একটি নতুন “বন্ধুত্ব চুক্তি” সই করেছেন, যাতে ব্রিটেনে অভিবাসী পাচারকে জার্মানিতে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। এটি কার্যকর হবে ২০২৫ সালের মধ্যে।
এর আগে স্টারমার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে “ওয়ান ইন, ওয়ান আউট” চুক্তি করেছেন, যেখানে অভিবাসী ফেরত পাঠানোর সুযোগ তৈরির ঘোষণা এসেছে। তবে বাস্তবচিত্রে পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।
জার্মানি বর্তমানে অভিবাসীদের ট্রানজিট কেন্দ্র ও তাদের ব্যবহৃত নৌকা, ইঞ্জিন ও লাইফজ্যাকেটের গুদামঘরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু জার্মান আইন অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে অভিবাসী পাচার এখনও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ সরকারের সমালোচনায় বলেন, “স্টারমারের এই সব উদ্যোগ মুখরক্ষার চেষ্টামাত্র। সংকট মোকাবিলায় কোনও বাস্তব পরিকল্পনা নেই। পরিস্থিতি তার শাসনে আরও খারাপ হয়েছে।”
হোম অফিস জানিয়েছে, “এই বিপজ্জনক নৌকা যাত্রা বন্ধ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চোরাচালানকারীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে আমরা সবকিছু করব।”
জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়েছে, ২০৯৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১ লাখের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে আসবে। অভিবাসন না থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে ব্রিটেনের জনসংখ্যা ৫০ মিলিয়নের নিচে নেমে আসত।
ব্রিটেনে অভিবাসীদের সর্বাধিক আগমনের উৎস দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পোল্যান্ড, পাকিস্তান, রোমানিয়া ও আয়ারল্যান্ড। ONS জানিয়েছে, ২০২২ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ৭.৩% বাড়বে, যা আগের দশকের তুলনায় বেশি।
ONS আরও জানিয়েছে, ২০২৪ সালে নিট অভিবাসনের সংখ্যা ছিল ৪৩১,০০০। যদিও এটি আগের বছরের ৯০৬,০০০ থেকে অনেকটাই কম, তবে মহামারির আগের গড়ের চেয়ে এখনও অনেক বেশি।
চাকুরি ও পড়াশোনার জন্য আগত অভিবাসীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও অভিবাসন প্রবণতা কমার ইঙ্গিত মেলে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। “এটি ইউকে’র ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা কাঠামোকে একেবারে নতুন রূপ দেবে,” বলেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মাইগ্রেশন অবজারভেটরি।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
১৭ জুলাই ২০২৫