TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে সীমান্ত! হোম অফিসে চাপে সরকার

গণ-অভিবাসনের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করাও এখন সন্ত্রাসবাদের আওতায় পড়তে পারে—এমনটাই উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের সরকারের উগ্রবাদবিরোধী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ‘প্রিভেন্ট’-এর একটি নথিতে। এতে বলা হয়েছে, “পশ্চিমা সংস্কৃতি গণ-অভিবাসন ও কিছু জাতিগত গোষ্ঠীর একীভবনের অনিচ্ছার কারণে হুমকির মুখে”—এমন ভাবনাকে চরমপন্থী ডানপন্থী মতাদর্শের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

সরকারি ভাষ্যে একে একটি ‘সন্ত্রাসবাদী ধারা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মানসিকভাবে পুনর্গঠন (ডি-র‌্যাডিকালাইজ) করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই প্রশিক্ষণ নথি সামনে আসতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো।
ফ্রি স্পিচ ইউনিয়ন-এর প্রধান টবি ইয়াং মন্তব্য করেন, “এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে যদি চরম ডানপন্থী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মূলধারার মধ্য-ডানপন্থী রাজনৈতিক মতও ‘অবৈধ’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।”

তিনি স্বরাষ্ট্র সচিব ইভেট কুপার-এর কাছে পাঠানো চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সাংস্কৃতিক পরিচয়, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং একীভবন নিয়ে উদ্বেগ এখন যদি ‘সন্ত্রাসবাদ’ হয়ে যায়, তবে আমাদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ গভীর সংকটে পড়বে।”

এদিকে হোম অফিস দাবি করেছে, “প্রিভেন্ট কোনোভাবেই মতপ্রকাশ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং যারা উগ্র মতাদর্শে প্রভাবিত হতে পারেন, তাদের ঝুঁকি হ্রাস করাই এর মূল লক্ষ্য।”

তবে বাস্তবতা হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রিভেন্ট কর্মসূচি একাধিকবার বিতর্কে পড়েছে। কখনও স্কুলের ছাত্রকে কেবল ইসরায়েলের সমালোচনায় অংশ নেওয়ার কারণে ‘চরমপন্থী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, আবার কখনও মুসলিম ছাত্রদের শুধুমাত্র আরবি বই পড়ার জন্য সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই বিতর্কের মধ্যেই মাত্র একদিনে ১,১৯৪ জন অবৈধ অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় ব্রিটেনে প্রবেশ করেছে। ২০২৪ সালেই এরকম ঘটনার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

অবৈধভাবে আসা এসব মানুষদের অনেকেই চোরাপথে নগদ কাজ পান, কেউ কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে হোটেলে বসবাস শুরু করেন। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের নীতিগত অস্থিরতা ও ‘মানবাধিকার আইনের’ ফাঁকফোকর এই প্রবণতা বন্ধ করতে পারেনি।

নতুন স্বরাষ্ট্র সচিব ইভেট কুপার যদিও নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন, তার দল লেবার পার্টি এখনো ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন (ECHR) থেকে সরে আসার কোনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।
লেবার এমপি জো হোয়াইট বলেন, “যদি একটি আলবেনীয় অপরাধীর ছেলে বিদেশে চিকেন নাগেট না পছন্দ করে, সেই আবেগের দোহাই দিয়ে কীভাবে তাকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়—তা মানুষ মেনে নিতে পারছে না।”

তবে, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, লেবার এখনো শরণার্থী ও মানবাধিকার ইস্যুতে একধরনের রাজনৈতিক সুশীলতা বজায় রাখছে, যা বাস্তব সমস্যার সমাধানে বড় অন্তরায়।

অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টি দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও বাস্তবভিত্তিক আইন প্রণয়ন বা কার্যকরী প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। ‘রুয়ান্ডা পরিকল্পনা’ আদালতে বারবার আটকে গেছে, আর সীমান্ত নিরাপত্তায় প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার না করায় চ্যানেল পারাপারের সংখ্যা অপ্রতিরোধ্যভাবে বাড়ছে।

রিফর্ম ইউকে পার্টি যাদের কঠোর অভিবাসনবিরোধী নীতি কিছু জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তারাও সমাধানমুখী কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে পারেনি অভিবাসন নিয়ে। শুধুমাত্র সীমান্ত বন্ধ, অভিবাসন বন্ধ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে জনতুষ্টি আদায়ের রাজনীতি করে যাচ্ছে তারা বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন পরিস্থিতি এখন আর শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, এটি একটি নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের ইস্যুতে রূপ নিয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, মানবিকতা ও বাস্তবতা—এই চারটি শক্তির টানাপোড়েনে জনমনে বিভ্রান্তি বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থতার দায় এড়াতে চাইলেও, সাধারণ মানুষ এর মূল্য দিচ্ছে সরাসরি।

সূত্রঃ দ্য সান

এম.কে
০৯ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

৯ মাসে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ ২৫ হাজারেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশীর

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জরুরি সহায়তার অর্থে জুয়া খেলার অভিযোগ

ভিন্ন নামে যুক্তরাজ্যে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন নেতানিয়াহুর পুত্র, কর ফাঁকির অভিযোগ