TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে লেবার সরকারের আমলে তরুণদের চাকরি সংকট চরমেঃ ‘নষ্ট প্রজন্ম’ তৈরির আশঙ্কা

যুক্তরাজ্যে লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব চাকরি কমেছে, তার প্রায় অর্ধেকই হারিয়েছে ২৫ বছরের নিচের তরুণরা—এমন উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে। কোভিড পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ বেকারত্ব বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে এই যুব চাকরি সংকট।

গত বছরের জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানির পেরোল থেকে বাদ পড়েছে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার চাকরি। এর ৪৬%–ই হারিয়েছে তরুণ শ্রমিকরা—অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫০টির বেশি চাকরি হারাচ্ছে ২৫ বছরের নিচের কর্মীরা। এই পরিস্থিতিকে দেশের ভবিষ্যতের জন্য গভীর হুমকি হিসেবে দেখছেন সাবেক শিক্ষা সচিব ডেভিড ব্লাংকেট।

ব্লাংকেট সতর্ক করে বলেন, “আমরা সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পুরো একটি প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাবে। এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব হবে ভয়াবহ।” তিনি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে টনি ব্লেয়ারের প্রথম মেয়াদে চালু হওয়া “নিউ ডিল ফর ইয়ুথ” কর্মসূচির আধুনিক সংস্করণ পুনরায় চালুর আহ্বান জানান।

গত এক বছরে যুব বেকারত্ব ১৪.৮% থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫.৩%—যা কোভিড-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ। এটি ১৬ বছরের ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক বেকারত্বের তুলনায় তিন গুণ বেশি। দীর্ঘমেয়াদি যুব বেকারত্বও এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২৪-এর তুলনায় নভেম্বরে কোম্পানি পেরোলে ৭৭,০০০ কম তরুণ কর্মী রয়েছে। ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের চাকরি হারানোর হার সবচেয়ে বেশি। যদিও নভেম্বরে কিছুটা পুনরুদ্ধার দেখা গেছে, তবুও সামগ্রিক সংখ্যা আগের তুলনায় কম।

সরকারের সমালোচকেরা দায় চাপাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভসের ওপর। কারণ গত বাজেটে তিনি ব্যবসায়ীদের ওপর ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স অবদান ২৫ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়িয়েছিলেন। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সতর্ক করেছে, এই কর বৃদ্ধির ফলে আতিথেয়তা ও খুচরা-বাণিজ্য খাতে নিয়োগ কমেছে—যেখানে সাধারণত তরুণরা প্রথম চাকরি পায়।

শেডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড বলেন, “যদি নষ্ট প্রজন্ম তৈরি হয়, তার দায় সম্পূর্ণ অর্থমন্ত্রীর।” লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা আসন্ন বাজেটে এই কর বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, “যুব চাকরি সংকট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরক হয়ে উঠছে।”

এদিকে সরকারের ভেতরেও উৎকণ্ঠা বাড়ছে, কারণ আসন্ন প্রতিবেদনে NEET (শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণ)–এর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে—যা এক দশকের মধ্যে প্রথমবার।

এই পরিস্থিতিতে কর্ম ও পেনশন বিষয়ক মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন সাবেক স্বাস্থ্য সচিব অ্যালান মিলবার্নকে যুব কর্মহীনতা বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে একটি স্বাধীন পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন। সরকার জানিয়েছে, এ পর্যালোচনা সংকট মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

চ্যান্সেলর রিভস আসন্ন বাজেটে “ইয়ুথ গ্যারান্টি” নামে একটি কর্মসূচিতে নতুন তহবিল ঘোষণা করতে পারেন, যার মাধ্যমে ১৮ মাস ধরে ইউনিভার্সাল ক্রেডিটে থাকা তরুণদের জন্য বেতনের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

সরকারের মুখপাত্র বলেন, “যুব বেকারত্বের এই চিত্র অগ্রহণযোগ্য। আমরা দেশের তরুণদের জন্য সুযোগ বিস্তারে কাজ করছি—ইয়ুথ হাব সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে ইয়ুথ গ্যারান্টি পর্যন্ত।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় আরও বৃহৎ পরিসরের বিনিয়োগ ও উদ্যোগ ছাড়া লেবার সরকারের সামনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যাবে না কোয়েলোকেঃ যুক্তরাজ্য আদালত

বার্মিংহামে নবজাতককে না দেখেই কোভিডে মারা গেলেন মা

অনলাইন ডেস্ক

ইউক্রেনে ব্রিটিশ ত্রাণকর্মী নিখোঁজ: মরদেহ উদ্ধারের দাবি

নিউজ ডেস্ক