TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে লেবার সরকারের নতুন আশ্রয় পরিকল্পনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাজ্যের ২২৫টি কমিউনিটি, দাতব্য, ধর্মীয়, শিল্প, ক্রীড়া ও ব্যবসায়িক সংগঠন হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদের নতুন আশ্রয় নীতি সংস্কার পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করে খোলা চিঠিতে সতর্ক করেছে—তিনি যেন “বিভাজন সৃষ্টিকারীদের হাতে না খেলেন”। তারা এই পরিকল্পনাকে “নিষ্ঠুর”, “নির্মম” এবং যুক্তরাজ্যের মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে।

 

গত মাসে ঘোষিত নতুন নীতিতে মিথ্যা আশ্রয় দাবির বিরুদ্ধে কড়াকড়ি, ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দেওয়া কমানোর উদ্যোগ এবং শরণার্থীদের স্থায়ী সুরক্ষা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া আবেদন প্রত্যাখ্যাত পরিবার—শিশুসহ—দ্রুত অপসারণ এবং নিঃস্ব আশ্রয়প্রার্থীদের আর্থিক সহায়তার আইনি বাধ্যবাধকতা বাতিলের ঘোষণাও দেওয়া হয়। একইসঙ্গে শরণার্থীদের স্বয়ংক্রিয় পারিবারিক পুনর্মিলনের অধিকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিলের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপগুলোকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে খোলা চিঠিতে বলা হয়, দেশের কমিউনিটিগুলো শরণার্থীদের প্রতি উষ্ণতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে গর্ববোধ করে—এবং সরকারের নতুন পরিকল্পনা তা প্রতিফলিত করে না। চিঠিতে লেখা হয়, “আপনি বলেছেন বিভাজন দূর করা নৈতিক দায়িত্ব। আমরা একমত। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি নেতাদের ব্যবহৃত ক্ষতিকর ভাষা ও শরণার্থী অধিকার সংকোচনের নির্মম পরিকল্পনা বিভাজন আরও বাড়াবে।”

চিঠিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধ ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষরা চরম মানসিক আঘাত নিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চান। তাদের পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের সহায়তা প্রয়োজন, অথচ সরকার সহমর্মিতার বদলে কঠোরতাকে বেছে নিচ্ছে। “এখন স্থানীয় কমিউনিটি ও শরণার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা কারও হাতে খেলার সময় নয়,” উল্লেখ করা হয়।

স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকান অ্যান্ড ক্যারিবিয়ান সাপোর্ট অর্গানাইজেশন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, কেয়ারফরক্যালাইসের শাখাসমূহ, ফেয়ারট্রেড গ্রেটার ম্যানচেস্টার, গোভান কমিউনিটি প্রজেক্ট, টক্সটেথ উইমেনস সেন্টার, ওয়েস্ট কর্নওয়াল এগেইনস্ট রেসিজম এবং বিভিন্ন শহরের সিটি অ্যান্ড টাউন অব স্যাংচুয়ারি নেটওয়ার্ক।

এদিকে এসব সংগঠনের অংশগ্রহণে হোম অফিসের সামনে বিক্ষোভ এবং ‘কমিউনিটিজ টুগেদার ফর রিফিউজিস’ উদ্যোগের সপ্তাহব্যাপী সংহতি কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। এতে দেশজুড়ে ক্রিসমাস বাজার, খাবার, শিল্প-সংস্কৃতি পরিবেশনা ও সচেতনতা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জনসাধারণকে শরণার্থীদের পক্ষে সমর্থন জানাতে নিজস্ব পোস্টার তৈরিরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

টুগেদার উইথ রিফিউজিস নেটওয়ার্কের মিন্ডা বারগোস-লুকেস বলেন, বাস্তব পরিস্থিতিতে শরণার্থীরা কমিউনিটিতে যে সহমর্মিতা পান, তা ডানপন্থী গোষ্ঠীর ভয় ছড়ানোর প্রচারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। তারা প্রতিদিনই মানুষের সাহস ও মানবিকতার উদাহরণ দেখেন।

নীতিপত্রের ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেন, “মানুষ পাচারের জঘন্য ব্যবসা চলতে দেওয়া কোনোভাবেই সহমর্মিতা নয়… বর্তমান আশ্রয় ব্যবস্থা অবৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করছে।” একই নথিতে শাবানা মাহমুদ মন্তব্য করেন, আশ্রয় ব্যবস্থা এক সহজ যুগে তৈরি হয়েছিল, যা আধুনিক সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ডায়াবেটিস পরীক্ষায় ভুল ফলঃ ইংল্যান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কমপক্ষে ৫৫ হাজার রোগী

রাশিয়ার হুমকিতে পিছু হটল যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে সেপ্টেম্বরের পর থেকে করোনায় সবচেয়ে কম মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক