যুক্তরাজ্যে প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন দারিদ্রসীমার নীচে জীবনযাপন করছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করছে, যা এই শতাব্দীতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সামাজিক মেট্রিক্স কমিশনের (SMC) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন এবং প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন দারিদ্রতার মধ্যে জীবনযাপন করছে। এই গবেষণায় ব্রেক্সিট-পরবর্তী নতুন পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার গ্রহণ করে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটে ২০১৯ সাল থেকে আরও ২০ লাখ মানুষ মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে। মোট ১৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ, বা যুক্তরাজ্যের ২৪% জনগণ দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছে, যা ২০০০ সালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।
শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর আগের তুলনায় ২,৬০,০০০ বেশি শিশু দারিদ্রতার মধ্যে পড়েছে, যার ফলে বর্তমানে ৩৬% শিশু (৫.২ মিলিয়ন) দারিদ্রতার শিকার।
এই রিপোর্ট লেবার পার্টিকে দুই-শিশু ক্যাপ সীমা বাতিল করার জন্য নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে জানা যায়। কারণ, দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৫.২ মিলিয়ন শিশুর মধ্যে ৫৫% তিন বা তার বেশি সন্তানের পরিবারের অন্তর্গত। তবে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার এই ক্যাপ সীমা বাতিলের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ এর বার্ষিক খরচ ৩ বিলিয়ন পাউন্ড।
SMC-এর প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি পরিবারের আয়ের পাশাপাশি তাদের সম্পদ এবং অন্যান্য খরচকেও বিবেচনা করে।
২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত, বর্তমান মডেল অনুযায়ী, ১৮% মানুষ (যার মধ্যে ৩.৬ মিলিয়ন শিশু) দারিদ্রতার মধ্যে রয়েছে। তবে নতুন মডেল অনুযায়ী আরও ১.৬ মিলিয়ন শিশু দারিদ্রতার মধ্যে পড়েছে।
এই সময়ে যুক্তরাজ্যের জীবনযাত্রার মান ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ১.৮ মিলিয়ন বেড়ে ২০২২-২৩ সালে ৮.৭ মিলিয়নে পৌঁছেছে। দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা মানুষের মধ্যে ৫৪% পরিবারে অন্তত একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন।
এছাড়া, দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ১.৬ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ১০% সম্পূর্ণ কর্মসংস্থান থাকা পরিবার থেকে এসেছে।
ট্রাসেল ট্রাস্ট জানিয়েছে যে, গত পাঁচ বছরে তাদের বিতরণ করা জরুরি খাদ্য প্যাকেটের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩ মিলিয়নেরও বেশি প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে, যার ১ মিলিয়নেরও বেশি শিশুদের জন্য।
ট্রাস্টের নীতি পরিচালক হেলেন বার্নার্ড বলেছেন, “দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা শিশুদের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি প্রতিফলিত করে যে আমাদের ফুড ব্যাংকগুলোর চাহিদা কতটা বেড়েছে।”
ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশন (DWP)-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা জাতীয় জীবিকা ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি সুবিধা হারের উন্নতি করছি। আমাদের শিশু দারিদ্র্য টাস্কফোর্স একটি উচ্চাভিলাষী কৌশল তৈরি করছে, যাতে শিশুদের জীবনের সেরা শুরু দিতে পারি।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ নভেম্বর ২০২৪