লন্ডনের ক্যানারি ওয়ার্ফের বিতর্কিত চার-তারকা ব্রিটানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে গভীর রাতে এক কোচ ভর্তি আশ্রয়প্রার্থীকে প্রবেশ করানো হয়েছে। রাত ১টা ৪০ মিনিটে প্রায় ৪০ জন পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীকে কোচ থেকে নামিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় হোটেলে প্রবেশ করানো হয়। এ ঘটনা ঘটে ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে, যখন দেশজুড়ে হোটেলগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়।
ব্রিটানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হোটেলটি সম্প্রতি করদাতাদের অর্থে পরিচালিত “সার্জ” আবাসনে রূপান্তরিত হয়েছে। ৫০০ কক্ষবিশিষ্ট এই হোটেলটি, যেখানে সাধারণ অতিথিদের জন্য আগে প্রতি রাতের ভাড়া ছিল £৪২৫ পাউন্ড, এখন হোম অফিসের জন্য প্রতি রাত £৮১ পাউন্ড খরচে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। হোটেলে রেস্টুরেন্ট, বার, গেমস রুম ও জিম থাকলেও আশ্রয়প্রার্থীরা এসব সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
হোটেলটি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও করদাতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের বিলাসবহুল আবাসন প্রদানের সিদ্ধান্তকে অনেকেই করদাতাদের অর্থের অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মেরি (৫৮) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি সারা জীবন কর পরিশোধ করেছি, পেনশনে কষ্টে বেঁচে আছি, আর অভিবাসীরা চার-তারকা হোটেলে থাকছে?”
হোটেলের আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও সম্পত্তির দামের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। স্থানীয় সম্পত্তি এজেন্টরা জানিয়েছেন, তাদের ক্লায়েন্টরা হোটেল ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পত্তির ভবিষ্যৎ মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে “করদাতাদের প্রতি অপমান” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “সরকার বিলাসবহুল হোটেলে অবৈধ অভিবাসীদের রাখছে, যখন সাধারণ মানুষ কেন্দ্রীয় লন্ডনে একটি হোটেল বুক করতে হিমশিম খায়। সরকারকে প্রতিটি অবৈধ আগমনকারীকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে।”
হোম অফিস জানিয়েছে, তারা পূর্ববর্তী টরি সরকারের থেকে একটি “ভাঙা আশ্রয় ব্যবস্থা” উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। বর্তমান লেবার সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, সংসদীয় মেয়াদের শেষ নাগাদ সব আশ্রয় হোটেল বন্ধ করা হবে। সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার, বহিষ্কার বৃদ্ধি এবং ব্যয়বহুল আবাসন চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে লন্ডনের পাশাপাশি নিউক্যাসল ও সারে-সহ বিভিন্ন শহরে হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ইস্লিংটনের থিসল সিটি বারবিকান হোটেলের বাইরে পুলিশি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং পাল্টা বিক্ষোভ চলার মধ্যেই আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেল ব্যবহারের সরকারি সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক আরও গভীর হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য সান
এম.কে
০৪ আগস্ট ২০২৫