ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন জানায়, যুক্তরাজ্যে অপরাধীরা অনলাইনে আরও বিস্তৃত পরিসরে শিকার ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
নতুন তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা প্রথমবারের মতো সেক্সটর্শন অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (IWF) জানিয়েছে, এই উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখাচ্ছে যে ব্ল্যাকমেইলকারী অপরাধীরা আরও বিস্তৃতভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যাতে বেশি সংখ্যক ভিকটিমকে ফাঁদে ফেলা যায়।
সেক্সটর্শন হলো এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল, যেখানে সাধারণত কিশোর ছেলেদের ও মেয়েদের– প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি পাঠাতে বাধ্য করা হয়।
এই প্রতারকরা সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কিশোরদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং পরে তাদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করে। যদি ভিকটিম টাকা না দেয়, তবে অপরাধীরা ছবি বা ভিডিও অন্যদের সাথে শেয়ার করার হুমকি দেয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারনেট নিরাপত্তা সংস্থা IWF জানিয়েছে, গত বছর ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের সেক্সটর্শনের শিকার হওয়ার পাঁচটি নিশ্চিত ঘটনা পাওয়া গেছে।
১৭ বছরের নিচে মোট ১৭৫টি নিশ্চিত সেক্সটর্শন ঘটনার মধ্যে ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও সংস্থাটি বলছে, এটি একটি বড় সমস্যা যা আরও ভয়ানক হতে পারে।
IWF-এর হটলাইন ম্যানেজার টামসিন ম্যাকন্যালি বলেন,
“এই বয়সী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানানো খুবই উদ্বেগজনক। সংখ্যাটি এখনো কম, তবে আমি আশঙ্কা করি এটি আরও বাড়বে।”
গত মাসে এডিনবরার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সতর্ক করা হয়েছিল, কারণ একজন আট বছর বয়সী মেয়ে সেক্সটর্শনের শিকার হয়।
বিদ্যালয় থেকে জানানো হয়, কেউ স্ন্যাপচ্যাটে শিক্ষার্থীদের ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা করছিল এবং পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে তারা বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছে, যেখানে অশ্লীল ছবি শেয়ার করা হয়েছে।
IWF জানায়, অপরাধীরা এখন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে, যেখানে তারা শুধু ছবি শেয়ার করার হুমকি দেয় না, বরং ভিকটিমকেই যৌন অপরাধের অভিযুক্ত হিসেবে সাজানোর ভয় দেখায়।
ম্যাকন্যালি বলেন,
“এখন তারা বলছে, ‘আমরা শুধু ছবিটি অন্যদের কাছে পাঠাব না, বরং এমনভাবে উপস্থাপন করবো যেন তুমি নিজেই একটি যৌন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হও’। এটি ভিকটিমদের উপর ভয়ানক মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের টাকা দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।”
গত বছর ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় এবং জানিয়েছিল, প্রয়োজনে অভিযুক্তদের প্রত্যর্পণের জন্য কাজ করবে।
NCA-এর তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম আফ্রিকা, বিশেষ করে নাইজেরিয়া, সেক্সটর্শন গ্যাংদের জন্য একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
ম্যাকন্যালি বলেন, অনেক শিশু সেক্সটর্শনের শিকার হওয়ার পর ভয় ও লজ্জার কারণে চুপচাপ থাকে এবং জানে না যে ইন্টারনেট থেকে এই ধরণের ছবি মুছে ফেলার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
‘Report Remove’ নামে একটি পরিষেবা IWF এবং শিশু কল্যাণ সংস্থা NSPCC পরিচালনা করে, যা শিশুদের গোপনীয়ভাবে তাদের অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও রিপোর্ট করার সুযোগ দেয়।
এই টুলটির মাধ্যমে টেক প্ল্যাটফর্মগুলো ওই ছবি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে পারে বা আপলোড প্রতিরোধ করতে পারে।
২০২৪ সালে Report Remove পরিষেবার ব্যবহার ৪৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ১,১৪২টি রিপোর্ট প্রক্রিয়াকৃত হয়েছে।
১৭৫টি সেক্সটর্শনের ঘটনার মধ্যে ১৫১টি এই টুলের মাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে।
IWF-এর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী ডেরেক রে-হিল বলেছেন:
“এটি সম্পূর্ণ স্পষ্ট যে, Report Remove টুল যে সেবা প্রদান করে, তার প্রয়োজনীয়তা কখনোই এত বেশি ছিল না।”
তিনি আরও বলেন,
“এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে অপরাধীরা নির্মমভাবে আমাদের শিশুদের অনলাইনে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে যাচ্ছে, কারণ তারা জানে যে শিশুরা সহজেই ভয়, শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে পারে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ মার্চ ২০২৫