অনেক ইউকে ইমিগ্রেশন ক্যাটাগরিতে একটি শর্ত থাকে যে ভিসাধারী যদি অনির্দিষ্টকালীন বসবাসের (Indefinite Leave to Remain – ILR) জন্য আবেদন করতে চান, তবে তিনি কোনও ১২ মাসের সময়সীমায় ১৮০ দিনের বেশি যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকতে পারবেন না।
ভালো খবর হলো, এই নিয়ম জীবনসঙ্গী (spouse) ও পার্টনার ভিসাধারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
জীবনসঙ্গীদের জন্য কি অনুপস্থিতির কোনো সীমা আছে?
সংক্ষেপে বললে, না। দাম্পত্য ও পার্টনার সম্পর্কিত অভিবাসন নিয়মাবলীতে (Appendix FM) এমন কোনো বিধান নেই, যেখানে বলা হয়েছে যে জীবনসঙ্গী বা পার্টনার ভিসাধারীকে নির্দিষ্ট দিনের বেশি যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকা যাবে না।
তবে এর অর্থ এই নয় যে কেউ এই রুটে ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে খুব কম সময় থাকলেও সহজেই স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়ে যাবেন।
যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে একসঙ্গে বসবাসের ইচ্ছাঃ
যখন কেউ প্রথমবারের মতো জীবনসঙ্গী বা পার্টনার ভিসা পান, তখন তাকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় প্রাথমিকভাবে ৩৩ মাস (যদি বিদেশ থেকে আবেদন করা হয়) বা ৩০ মাস (যদি যুক্তরাজ্যের ভেতর থেকে আবেদন করা হয়)।
এই ভিসার অনুমোদনের জন্য হোম অফিসকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে আবেদনকারী ও তার সঙ্গী নির্ধারিত সমস্ত শর্ত পূরণ করেন এবং তারা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে একসঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা রাখেন। এটি Appendix FM-এর E-ECP.2.10 এবং E-LTRP.1.10 অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর, ILR পাওয়ার জন্য দুটি পথ রয়েছেঃ
৫ বছরের স্বাভাবিক রুট – যেখানে মাঝপথে একবার ভিসা নবায়ন করতে হয়।
১০ বছরের দীর্ঘ রুট – যেখানে কঠোর “ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির” শর্ত পূরণ করতে হয় এবং তিনবার ভিসা নবায়ন করতে হয়।
যখন জীবনসঙ্গী বা পার্টনার ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়, কিংবা ILR-এর জন্য আবেদন করা হয়, তখন আবারও তাদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা যাচাই করা হয়।
আপনি কি যুক্তরাজ্যের বাইরে সময় কাটিয়ে স্থায়ী বসবাসের ইচ্ছা প্রমাণ করতে পারবেন?
হ্যাঁ, তবে যদি আবেদনকারী ছুটি কাটানো, পরিবারের সাথে দেখা করা বা অফিসের কাজে কিছুদিন যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকেন, তবে সাধারণত সমস্যা হয় না। তবে হোম অফিসের পারিবারিক জীবনবিষয়ক নীতিমালায় বলা আছে যে যদি দম্পতি বা তাদের একজন বেশিরভাগ সময় যুক্তরাজ্যের বাইরে কাটান, তবে এটি সন্দেহ তৈরি করতে পারে যে তারা সত্যিই যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে চান কি না।
এর মানে এই নয় যে যিনি দীর্ঘ সময় যুক্তরাজ্যের বাইরে কাটিয়েছেন, তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন প্রত্যাখ্যানের শিকার হবেন।
হোম অফিস প্রতিটি কেস আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে এবং নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করে:
ভ্রমণের কারণ
অনুপস্থিতির সময়কাল
আবেদনকারী এবং তার জীবনসঙ্গী কি একসঙ্গে ভ্রমণ ও বসবাস করেছেন
আবেদনকারীদের তাদের যুক্তরাজ্যের বাইরে কাটানো সময়ের সঠিক নথি সংরক্ষণ করা উচিত। যদি কোনও ঝুঁকি থাকে যে কেসওয়ার্কার মনে করতে পারেন যে আবেদনকারী ও তার সঙ্গী একসঙ্গে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান না, তবে যথাযথ প্রমাণ সংরক্ষণ করা উচিত, যা পরবর্তী আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া যেতে পারে।
এটি হতে পারে—
যুক্তরাজ্যের বাইরে কাটানো সময়ের কারণ সম্পর্কিত নথি
যুক্তরাজ্যে থাকা জীবনসঙ্গীর পেশা, আয়ের উৎস, বসবাসের স্থান, বন্ধুবান্ধব, শখ ইত্যাদির প্রমাণ
তবে, কারণ ও প্রমাণ অবশ্যই যথাযথ হতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ—
✅ যদি কোনও ব্যক্তি অসুস্থ বাবা-মার যত্ন নেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় বাইরে কাটান এবং তার সঙ্গী ও সন্তানরা যুক্তরাজ্যে থেকে যান, তবে ডাক্তারি প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রমাণ সহ আবেদন করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
❌ তবে, যদি কেউ যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া পছন্দ না করায় ৩০ মাসের মধ্যে ২৮ মাস সেন্ট ট্রোপেজে কাটাতে চান, তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
অন্যদিকে, যদি একজন কর্মরত জীবনসঙ্গী অফিসের কাজে বিদেশে যান এবং ভিসাধারীও তার সঙ্গে যান, তবে এটি সমস্যার কারণ হবে না, যতক্ষণ না তারা পুরোপুরি যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যান।
মিথ্যা কারণ দেখানোর প্রলোভনে পা দেবেন নাঃ
যেকোনো ইউকে অভিবাসন আবেদনের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য বা জাল প্রমাণ জমা দেওয়া বিপজ্জনক। আবেদনপত্রে অনুপস্থিতির বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্ন থাকে, এবং ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে।
তাই, যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরা এবং সঠিক তথ্য প্রদান করাই নিরাপদ পথ।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
০৬ মার্চ ২০২৫