TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

যে পঞ্চপাণ্ডবদের হাতে ধ্বংস হয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত আজ শুধু অদক্ষতা নয়, বরং পরিকল্পিত লুটপাট, প্রভাবশালী চক্রের দৌরাত্ম্য এবং স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিদ্যুৎ খাত নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল পাঁচজন প্রভাবশালী ব্যক্তি—যাদের ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটি অদৃশ্য অথচ অত্যন্ত প্রভাবশালী ‘পঞ্চপাণ্ডব’ সিন্ডিকেট।

এই চক্রের সদস্যরা হলেন:

১. আজিজ খান – সামিট গ্রুপের কর্ণধার

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যক্তিখাতের অন্যতম বড় নাম হলেও সামিট গ্রুপকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে অস্বচ্ছ চুক্তি, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি এবং প্রভাব খাটিয়ে একচেটিয়া বাজার দখলের। আজিজ খান রাজনৈতিক লবিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি পেয়ে গেছেন যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে জনগণের কোনো উপকার নেই, বরং তীব্র ঋণের বোঝা সৃষ্টি করেছে।

২. নসরুল হামিদ বিপু – বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চরম পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। বিপুর নেতৃত্বে অনেক প্রকল্পে ঠিকাদারি ও দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যেখানে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সুবিধাভোগী হয়েছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী।

৩. আবুল কালাম আজাদ – প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রণে থেকে একাধিক বড় প্রকল্পের সিদ্ধান্তের পেছনে আজাদের প্রত্যক্ষ হাত ছিল। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বহু বিতর্কিত প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি ত্রুটির নেপথ্যে ছিলেন তিনি। এসব প্রকল্পে অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত ব্যয় এখনো রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে চরম চাপ সৃষ্টি করছে।

৪. এস আলম গ্রুপ – চট্টগ্রামকেন্দ্রিক প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী

এস আলম গ্রুপ ভারত ও চীনভিত্তিক মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্পে একচেটিয়া ভূমিকা রাখছে। সরকারি সহযোগিতায় এবং রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় তারা দখল করেছে শত শত একর জমি, সমুদ্রবন্দর সংলগ্ন জায়গা এবং পেয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ। অথচ প্রকল্পের মান ও জনগণের উপকার নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন।

৫. ড. আহমদ কায়কাউস – সাবেক মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা

ড. কায়কাউস একসময় বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হয়ে গেছেন। বিদ্যুৎ খাতে তার নিয়ন্ত্রণকালে একাধিক চুক্তি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। তার সময়ে নেওয়া অনেক সিদ্ধান্ত আজ বিদ্যুৎ সঙ্কট ও দামের উর্ধ্বগতির মূল কারণ।

দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র

এই পাঁচজন ব্যক্তি ও তাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যে লুটপাটের সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তার ফলে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

*প্রকল্প বিলম্বের কারণে ঋণের সুদ বেড়েছে কয়েক গুণ।

*বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আকাশচুম্বী হওয়ায় জনগণের ওপর চাপ বেড়েছে।

*‘নো-কারেন্ট-পেমেন্ট’ চুক্তিতে কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ না করেও কোটি কোটি টাকা পাচ্ছে।

জনগণের শাস্তি, লুটেরাদের উৎসবঃ

প্রতিনিয়ত লোডশেডিং, বিলবৃদ্ধি এবং গ্রাহক হয়রানির মুখে জনগণ অথচ এই চক্র বছরের পর বছর ধরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির এ চক্র এখনো রাষ্ট্রীয় ছায়ায় নিরাপদ, তদন্ত নেই, বিচার নেই—বরং আরও বড় চুক্তির পথ তারা তৈরিই রেখেছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এখন আর কোনোভাবেই কেবল অব্যবস্থাপনার শিকার নয়—এটি ছিল সুসংগঠিত দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। আজিজ খান, বিপু, আবুল কালাম আজাদ, এস আলম ও কায়কাউস মিলে একটি অদৃশ্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, যার খেসারত দিচ্ছে আজ পুরো জাতি।

এম.কে
০৩ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

দেশ অস্থিতিশীল হলে তা মিয়ানমার ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সেও ছড়াবেঃ ড. ইউনূস

বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরিকল্পনায় সরকার বিরোধী আন্দোলনঃ রাশিয়া

লালমনিরহাটে পিটিয়ে হত্যার পর আগুনে পোড়ানো নিহত ব্যক্তিটি কে ছিলেন

অনলাইন ডেস্ক