11.6 C
London
December 24, 2024
TV3 BANGLA
ইউরোপ

রোমানিয়ার কাজের ভিসায় এসে দুর্দশায় বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিকেরা

নির্মাণ খাতের কাজ নিয়ে রোমানিয়ায় এসে প্রতিশ্রুত বেতন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন একদল বাংলাদেশি শ্রমিক৷ কর্মক্ষেত্রে নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন তারা৷ দেশটির রাজধানী বুখারেস্টে শোচনীয় পরিস্থিতিতে কোনোমতে টিকে আছেন এসব বাংলাদেশিরা৷

বুখারেস্টে একতলা একটি ভবনে প্রায় ৫০ জন দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী কর্মীর বসবাস৷ সেখানকারই একটি কক্ষের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন৷ ভালো আয়-রোজগারের স্বপ্নে ১৩ মাস আগে সাত লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচে তিনি এসেছেন ইউরোপের দেশ রোমানিয়াতে৷ শাহীন জানান নির্মাণ খাতের কাজের কথা বলে দেশটিতে আনা হলেও ‘সাপ্লায়ার’ তাকে কাজ দিয়েছে একটি কারখানায়৷

তার দাবি, বাংলাদেশ থেকে আসার আগে তাকে তিন হাজার লিউ বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু শাহীন এখন বেতন পান আড়াই হাজার লিউ৷ আসার আগে বলা হয়েছিল কোম্পানিই করের টাকা বহন করবে৷ কিন্তু আসার পর সেই টাকা তাকেই বহন করতে হচ্ছে৷ তার উপরও বেতন থেকে প্রতিমাসে কর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ২০০ থেকে ৪০০ লিউ কেটে রাখে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ বাকি টাকা দিয়েই সারা মাস চলতে হয়৷ নেই চিকিৎসা ভাতা বা অন্যান্য কোনো সুযোগ-সুবিধা৷

শুধু শাহীন নন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন এই ভবনটিতে থাকা অন্য বাংলাদেশিরাও৷ শুধু তাই নয়, অনেক সময় কী কারণে বেতনের টাকা কেটে রাখা হয় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সেই ব্যাখ্যাটুকুও দেয় না বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন৷

এমন অবস্থায় বেতনের টাকা দিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে এই অভিবাসীদের৷ তাই বাড়তি আয়ের জন্য তারা প্রত্যেকেই কম-বেশি ফুড ডেলিভারি বা ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী খাবার তার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কাজ করেন৷

এই অভিবাসীদের অভিযোগ রোমানিয়ায় আসার পর তারা টিআরসি বা সাময়িক বসবাসের যে অনুমতিপত্র পেয়েছেন তা কেড়ে নেয়া হয়, যাতে অন্য কোনো কোম্পানিতে তারা কাজ নিতে না পারেন৷ এমনকি বেতন-ভাতা বা কাজ নিয়ে অসন্তোষের কথা জানালে নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে বলেও হুমকি দেয়৷ এমন অবস্থায় তারা অন্যায়ের শিকার হলেও একই কোম্পানিতে কাজ করে যেতে বাধ্য হন৷

অনেক অভিবাসীরা জানান, শুরুতে কোম্পানি তাদের পাসপোর্টও জমা নিয়ে নেয়৷ কিন্তু পরে সবাই মিলে আন্দোলনের পর পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়েছে৷

ইউরোপের একটি দেশে এই অভিবাসীরা যে পরিবেশে থাকেন তা দেখে যে কেউ অবাক হতে পারেন৷ বড়জোর দুই জনের থাকার মতো একটি কক্ষে বাঙ্কার বেডে ছয় থেকে দশ জনও থাকেন সেখানে৷ ঘিঞ্জি ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে আছে ছারপোকার যন্ত্রণা, যার কারণে ঘুমানোই কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানান তারা৷

শধু যে বাংলাদেশিরাই আছেন সেখানে তা নন, আছেন ভারতীয় অভিবাসীরাও৷ তাদের পরিস্থিতিও একই৷ কর্মক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত বেতন, সুযোগ-সুবিধা না পাওয়াসহ থাকার শোচনীয় পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন তাদের কয়েকজন৷

ইউরোপে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা এখানে তার কিছুই নাই৷ যেই চাকরির কথা বলা হয়েছে তার কোনোটিই এখানে মিলছে না৷

রোমানিয়ায় এই পরিস্থিতিতে থাকতে হবে সে কথা ভাবেননি এই অভিবাসীদের কেউই৷ সবারই স্বপ্ন ছিল ইউরোপের দেশে কর্মক্ষেত্রে তাদের যথাযথ অধিকার থাকবে, জীবন-যাপনের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাগুলো তারা পাবেন৷ নিয়মিত বা বৈধ প্রক্রিয়ায় কাজ নিয়ে এসেও এমন পরিস্থিতির কারণে হতাশ তাই অনেকে৷

উল্লেখ্য, রোমানিয়ায় গত কয়েক বছরে অনেক বাংলাদেশি কাজের ভিসা নিয়ে এসেছেন৷ তাদের অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে অনিয়মিত পথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়েছেন৷ অভিবাসীদের অভিযোগ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না পেয়ে তারা অনেকেই সেনজেনভুক্ত দেশে পালানোর পথ বেছে নেন৷

সূত্রঃ ইনফো মাইগ্রেন্টস

এম.কে
০২ মে ২০২৪

আরো পড়ুন

ইউরোপে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ

নিউজ ডেস্ক

সহজ হচ্ছে ইউরোপের ব্লু-কার্ড পাওয়া

অনলাইন ডেস্ক

কেমন আছেন ইউরোপীয় মুসলিমরা