যুক্তরাজ্যের অন্যতম অভিজাত এলাকা ওয়েস্টমিনস্টারে মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাইটমুভের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে যেখানে গড় বাড়ির দাম ছিল প্রায় ১৫ লাখ পাউন্ড, সেই এলাকায় ক্র্যাক, স্পাইস ও হেরোইনের মিশ্রণে অচেতন হয়ে থাকা আসক্তরা দিনরাত রাস্তায় অবস্থান করছে। অনেকে রোমান ক্যাথলিক আর্চবিশপ অব ওয়েস্টমিনস্টারের বাসভবনের সিঁড়িতেও ঘুমিয়ে থাকে।
স্থানীয় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ডোজ মাত্র ৫ পাউন্ডে বিক্রি করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকাশ্যে কেনাবেচা চলছে, এবং বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতিদিন বারবার লোকজন সরাতে হয়। মাদকাসক্তরা আশেপাশের হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন ব্লকে ঢুকে কমন এলাকায় মলমূত্র ত্যাগ ও বমি করছে।
পুলিশ কমিউনিটি সাপোর্ট অফিসার জানিয়েছেন, এই এলাকায় মাদকের প্রাপ্যতা অত্যন্ত বেশি এবং দাম ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এসব অর্থ যোগাড় হয় মূলত চুরির মাধ্যমে। অনেক আসক্ত এখনো ইউনিভার্সাল ক্রেডিট ও স্বাস্থ্যজনিত ভাতা পাচ্ছে। নিম্নস্তরের অপরাধ, অসামাজিক আচরণ এবং সহিংসতার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে, আর মাদক ব্যবসায়ীদের বদলে অন্যরা এসে সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফ্রান্সিস স্ট্রিটের বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী জন ও’হেগান অভিযোগ করেছেন, গত তিন মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তিনি অচেনা কাউকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেন না। গেট ঠিকভাবে বন্ধ না থাকায় এবং খালি ফ্ল্যাটে রাস্তায় থাকা লোকজন অবস্থান করায় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। নতুন সিসিটিভি বসানো হলেও তা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে কি না, সন্দেহ রয়েছে।
এক বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী জানান, মাদকাসক্তরা দিনে তিন-চারবার সিঁড়ি ও রাস্তায় জড়ো হয়, এবং অনেক সময় বিপজ্জনক কুকুর নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। শিশুদের সামনেই মাদক সেবনের ঘটনা ঘটছে, যা স্থানীয়দের মনে ভয় তৈরি করছে। পুলিশ ডাকা হলেও আসার ঘটনা বিরল বলে অভিযোগ রয়েছে।
মার্ক ওয়েবস্টার নামের এক প্রাক্তন মদ্যপ জানান, স্থানীয় মাদকাসক্তদের অনেকেই বাস্তবে গৃহহীন নয়, বরং হোস্টেলে থাকে। তবে টাকা ও মাদক পাওয়ার জন্য রাস্তায় ঘুমায়, ফলে প্রকৃত গৃহহীনদের আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তার দাবি, মাদকাসক্তদের সহিংসতা এই এলাকাকে বিপজ্জনক করে তুলেছে, অথচ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদাসীন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ওয়েস্টমিনস্টারে রাস্তায় থাকা মানুষের সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। লন্ডনে ২০২৪/২৫ অর্থবছরে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ রাস্তায় ছিল, যা ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং আগের বছরের তুলনায় ১০% বেশি।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের কার্যালয় জানিয়েছে, ওয়েস্ট এন্ড এলাকায় ৫০% বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে এবং ৯০ জন অতিরিক্ত কর্মকর্তা অসামাজিক আচরণ ও চুরি দমনে কাজ করবেন। ওয়েস্টমিনস্টার ডায়োসিসও বাসিন্দাদের উদ্বেগের সঙ্গে একমত হয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে।
হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন এলঅ্যান্ডকিউ জানিয়েছে, নিরাপত্তা জোরদার, অতিরিক্ত সিসিটিভি স্থাপন, গেট ও ফেন্স উন্নতকরণ এবং বাড়তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হবে। মেট্রোপলিটন পুলিশও জানিয়েছে, অসামাজিক আচরণের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে এবং বাসিন্দাদের যেকোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
০৮ আগস্ট ২০২৫