যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, যেসব পোস্ট অফিসের কর্মীদের চুরির জন্য ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাদের প্রত্যেককে ৬০০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
তবে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১৮ মাস কারাগারে কাটানো হারজিন্দর বুটয় বলেছেন, “এই অর্থ যথেষ্ট নয়”। তিনি বলেন,আমি যৌথভাবে নটিংহামশায়ারের সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ডে একটি পোস্ট অফিস চালাতাম।আমাকে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত করে ৩ বছর ৩ মাসের কারাবাসের নির্দেশ দেয়া হয়। আমি ১৮ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। ক্ষতিপূরণের অর্থ দেখিয়ে আমাকে ফুসলানো যাবে না। এই অর্থের পরিমান আমার মানসিক চাপের জন্য কিছুই নয়।
পোস্ট অফিস ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের মধ্য হতে প্রায় ৭০০ টি প্রসিকিউশন ত্রুটিযুক্ত বলে জানা যায়। হরিজোন কেলেঙ্কারিতে ভুল অ্যাকাউন্টিং সফ্টওয়্যারের কারণে বিভিন্ন একাউন্ট হতে অর্থ অনুপস্থিত দেখা গিয়েছিল বলে তথ্যমতে জানা যায়।
সরকারের পোস্টঅফিস মন্ত্রী বলেন ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো “যদি” কিংবা “কিন্তু”র স্থান নেই। ভুলের মাশুল হিসেবে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
৭৬ বছর বয়সী নোয়েল থমাস বলেন ২০০৬ সালে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে ভুল মামলায় আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আমার জীবন হতে যা হারিয়ে গিয়েছে ৬০০ হাজার পাউন্ড দিয়ে কি তা সমাধান সম্ভব? আমার পরিবারের উপর যে মানসিক চাপ গিয়েছে তা অর্থ দিয়ে পরিমাপযোগ্য নয়। নরকের জীবন অতিবাহিত করেছি আমি ও আমার পরিবার। শুধু আমি নয় যাদেরকেই ভুলভাবে দায়ী করা হয়েছে তাদের সকলের উপর একই চাপ গিয়েছে।
তবে সরকার বলেছে যে এই ক্ষতিপূরণ প্রস্তাবটি সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে। চাইলে কেউ ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করতে পারেন অথবা বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় মামলা চালিয়ে যেতে পারেন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য।
পোস্টঅফিস মন্ত্রী কেভিন হোলিনরেক বলেছেন, ” যদি কেউ ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত হয় তার জন্য সরকার ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যদিও সরকার জানে অর্থ দিয়ে এই ক্ষতি পুষানো সম্ভব নয়। সরকার অনুধাবন করতে পেরেছে কেউ বছরের উপর কারাগারে থাকলে সে নিজের বাড়িটি হারিয়ে ফেলেছে কিংবা অনেকের হয়ত সংসার ভেঙ্গে গিয়েছে। তাই কোনো পরিমাণ অর্থই কখনও পর্যাপ্ত হবে না।”
উল্লেখ্য যে পোস্টঅফিস হরিজোন কেলেঙ্কারিটিকে “যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ন্যায়বিচারের গর্ভপাত” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৯৯৯ সাল হতে ২০১৫ এর মধ্যে, পোস্ট অফিস ও সাব পোস্ট অফিসের ৭০০ টি ব্রাঞ্চে হরিজোন নামক একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করায় সিস্টেমে তথ্যের ভুলভাল উপাত্ত প্রদান করে। যার কারণে অনেক কর্মচারীকে মিথ্যা তথ্য উপাত্ত প্রদান ও চুরির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যাদের অনেকেই আর্থিকভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছেন, অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন। সরকারের পক্ষ হতে হরিজোন কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে যা ২০২৪ সাল নাগাদ শেষ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়।
এম.কে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩