ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের চামড়া শিল্পে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ থাকা কাঁচা গরুর চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোরবানির সময় চামড়ার মূল্যহ্রাস ও অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষাই এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে সরকার।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। তৎকালীন সরকার দাবি করে, দেশীয় চামড়া শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং ট্যানারি শিল্পে কাঁচামাল নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সমালোচকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হলেও, মাঠপর্যায়ের সংগ্রাহক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও খামারিরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন।
বিশেষ করে কোরবানির মৌসুমে কাঁচা চামড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, এবং অনেক ক্ষেত্রে চামড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে ট্যানারি মালিকদের একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিমভাবে দাম কমিয়ে রাখছিল।
বানিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরুদ্দিন জানান, “স্থানীয় বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়া গেলে কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিকল্প চালু থাকবে। আমরা ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ দিতে চাই।”
তিনি আরও জানান, চামড়া ঢাকায় আনার বিষয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোরবানির ১০ দিনের মধ্যে ঢাকায় চামড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ঢাকাকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রোধ করা ও আঞ্চলিক বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা।
চামড়ার দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, চাহিদার ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করবে বাজার। প্রাথমিকভাবে ঢাকার ভেতরে ছোট গরুর চামড়ার সম্ভাব্য দাম ১৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১১৫০ টাকা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চামড়া ব্যবসায়ী ও খামারিরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগ চামড়া শিল্পে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা ভাঙতে সাহায্য করবে। তবে তারা রপ্তানি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, রপ্তানির দরজা খোলা থাকলে দেশি ট্যানারিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়ার অবস্থান আরও মজবুত হবে।
চামড়া রপ্তানিতে নতুন করে সুযোগ সৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে। তবে এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের দক্ষতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ওপর।
এম.কে
২৫ মে ২০২৫