ফ্রান্সে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হওয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং ২৮টি এনজিওর জোট৷
বরং এসব শিশুকে মানবপাচারের শিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ৷
বুধবার (৩০ জুলাই) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ জানায়, ‘‘ফ্রান্সে যেসব অভিবাসী শিশুরা অপরাধমূলক শোষণের শিকার, তাদের অনেক সময়ই অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ অথচ আন্তর্জাতিক ও ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী, তাদেরকে মানবপাচারের শিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রক্ষা করার কথা৷’’
সংস্থাটি ফ্রান্সের আইনি কাঠামোর একটি “পূর্ণাঙ্গ সংস্কার” চায়, যাতে অপরাধে ব্যবহৃত শিশুদের অপরাধী হিসেবে না দেখে, সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ফ্রান্সে মাদকপাচার, চুরি, ছিনতাই, দেহব্যবসা এবং প্রতারণার মতো অপরাধে ব্যবহৃত দুই-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়সি।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, এসব অপ্রাপ্তবয়স্কের ৯২ শতাংশই বিদেশি অভিভাবকবিহীন শিশু। তাদের অধিকাংশেরই জন্মস্থান আলজেরিয়া, মরক্কো, আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চল ও পূর্ব ইউরোপ৷ যাদের ৮৯ শতাংশই কিশোর বা বালক৷
ইউনিসেফ বলছে, ‘‘এই শিশুদের কেউ কেউ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অর্থ জোগাড়ের জন্য উত্তর ফ্রান্স অঞ্চলে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে৷ আবার কেউ কেউ, যেমন বসনিয়া থেকে আসা কিশোরীদের গণপরিবহণে পকেটমারির কাজে ব্যবহার করা হয়৷ তাদের দেখভালকারীরা হুমকি-ধমকি ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে এসব করাচ্ছে৷’’
ইউনিসেফের কর্মকর্তা করেন্তা বাইয়োলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “এই শিশুদের নেশায় আসক্ত করা হয়, ব্ল্যাকমেইল করা হয়, ভয় দেখানো হয় বা মানসিকভাবে চাপে রাখা হয়। অনেকেই মিথ্যা আশ্বাসে ফেঁসে যায় অথবা বেঁচে থাকার তাগিদে কিংবা ঋণ পরিশোধে বাধ্য হয়ে এসব করে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব শিশু অপরাধমূলক কাজে জড়িত কিন্তু তার পেছনে শোষণের মতো ঘটনা রয়েছে তাদেরকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। ফরাসি ফৌজদারি আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা উচিত যে, মানব পাচারের কারণে অপরাধ করলে সেই শিশু দায়মুক্তি পাবে।”
এই আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করে মানবপাচারের বিরুদ্ধে কাজ করা ২৮টি এনজিওর জোট।
জোটের সমন্বয়কারী জেনেভিভ কোলা বলেন,
পুলিশ ও বিচার বিভাগকে এমন প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা এসব শিশুকে প্রথমেই অপরাধী নয় বরং ভিকটিম হিসেবে বিবেচনা করে। এই দ্বৈত শাস্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “আগে আমরা কিশোরদের পাচারের শিকার হতে দেখতাম। এখন মাত্র আট বা দশ বছর বয়সি শিশুদেরও এই ভয়াবহ শোষণের মধ্যে পড়তে দেখছি।”
সূত্রঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস
এম.কে
১২ আগস্ট ২০২৫