প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার মনে করছেন ব্যবসা খাত যথাযথ প্রশিক্ষণ না দেয়ায় দেশটিতে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ আগামীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তিনি তা সহ্য করবেন না৷ অভিবাসন কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার৷
যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে না উঠা এবং সেজন্য অভিবাসীদের উপর নির্ভরতার কারণে উদ্যোক্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার৷ এ পরিস্থিতি বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি৷
একটি দেশে একটি বছরে যত মানুষ আসেন আর যতজন বেরিয়ে যান তার পার্থক্যকে নিট অভিবাসন বলা হয়৷ যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে নিট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৬৪ হাজার, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ৷ গত বছর এই সংখ্যাটি ছয় লাখ ৮৫ হাজারে নেমে এসেছে৷ এর বেশিরভাগ মূলত ইউরোপের বাইরের নাগরিক৷
২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অভিবাসন প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়েছে৷ সে বছর ব্রিটেনে নাগরিকেরা গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয়৷
২০২০ সালে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর ইইউ নাগরিকদের যুক্তরাজ্য বসবাস ও কাজের যে স্বাভাবিক সুবিধা ছিল তা উঠে যায়৷ এতে বিভিন্ন খাতে কর্মী সংকট দেখা দেয়৷
নির্মাণ ও সেবা খাতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কর্মী সংকট থাকা খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বুধবার বিবিসি রেডিওতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বলেছেন কোম্পানিগুলো এই কর্মী চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নিলে তিনি ‘ব্যবসাবিরোধী’ অবস্থান নেবেন না৷ বলেন, ‘‘কিন্ত আমি এটা বছরের পর বছর ধরে সহ্য করবো না৷’’
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা বা কর্মী ভিসায় আসা দুই ধরনের অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর জন্য তার সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে স্টারমারের বক্তব্যের পর নতুন কিছু ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা এসেছে৷ ‘উচ্চ নিট অভিবাসন’ কমাতে দক্ষ কর্মীর ঘাটতির বার্ষিক পর্যালোচনা এবং ভিসা স্পন্সরশিপের নিয়ম কঠোর করার কথা বলা হয়েছে৷ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘যেসব খাত অভিবাসী কর্মীদের উপর বেশি নির্ভরশীল তাদের দিকে লক্ষ্য রাখা হবে যাতে তারা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাজ্যে তাদের বিনিয়োগের ব্যর্থতার বিষয়টিতে নজর দেয়৷’’
স্টারমার জানান দক্ষ খাতগুলোর জন্য কর্মী ভিসার সংখ্যা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন৷ কারণ বিপরীত দিক যুক্তরাজ্যে শিক্ষানবিশ নিয়োগ দেয়ার সংখ্যা কমে গেছে৷ মঙ্গলবার রেকর্ড করা সাক্ষাৎকারটিতে তিনি বলেন, ‘‘এর থেকে আমি ইঙ্গিত পেয়েছি যে মৌলিকভাবে কিছু একটা ভুল হচ্ছে৷’’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান তিনি এমন কৌশল চান যার কারণে অভিবাসীদের উপর নির্ভরশীলতা কমবে৷ যাতে দেশের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা যায়৷
তবে অভিবাসীরা দেশের অর্থনীতি ও জনসেবা খাতে যে অবদান রেখেছেন তা খর্ব করছেন না বলেও একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ তার অভিযোগ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করে ব্যবসায়ী নেতারা অনেক অল্প বয়সিদের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছেন৷
সূত্রঃ বিবিসি রেডিও / এএফপি
এম.কে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪