4 C
London
February 10, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

আইনে পরিবর্তন পুলিশকে ‘হত্যার লাইসেন্স’ দেবে, ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সতর্কবার্তা

যুক্তরাজ্যে পুলিশ শক্তি ব্যবহারের জন্য অনুমতি চায় যার ভিত্তিতে নতুন আইন সংক্রান্ত পর্যালোচনা শিগগিরই আসতে যাচ্ছে ব্রিটেনে।

পুলিশ তাদের জন্য আইনের পরিবর্তন চায়, যা তাদের “হত্যার লাইসেন্স” দেবে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। যুক্তরাজ্য সরকার কর্মকর্তাদের প্রসিকিউশন থেকে নতুন সুরক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

সরকারের নির্দেশে পুলিশের দায়বদ্ধতা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা হয়েছে, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এই পর্যালোচনা শুরু হয়, যখন লন্ডনের সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে কাজ ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন, কারণ পুলিশ কর্মকর্তা মার্টিন ব্লেকের বিরুদ্ধে ক্রিস কাবাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল। ব্লেককে অক্টোবর মাসে মাত্র তিন ঘণ্টার বিচারে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ বলছে, তারা এমন একটি ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা চায় যা তাদের দায়িত্ব পালনে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, পুলিশের জবাবদিহিতার বর্তমান ব্যবস্থাই দুর্বল, আর এটিকে আরও দুর্বল করলে জনআস্থার ক্ষতি হবে।

পুলিশের জবাবদিহিতা দুর্বল না করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংগঠন গুলো।

গার্ডিয়ানের হাতে আসা একটি চিঠিতে ইনকোয়েস্ট, সেন্টার ফর উইমেনস জাস্টিস, লিবার্টি এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারকে পুলিশের জবাবদিহিতা দুর্বল না করার আহ্বান জানিয়েছে।

তারা লিখেছে, “এই পর্যালোচনাটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত এবং বিপজ্জনক প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে একটি আলোচিত মামলা ব্যবহার করে পুলিশের কর্মকাণ্ডের ওপর কম নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

তারা আরও উল্লেখ করেছে, “যে সংখ্যক ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করা হয়, তা অত্যন্ত নগণ্য (১৯৯০ সালের পর থেকে মাত্র এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা বা অনিচ্ছাকৃত হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে)।

২০২৩-২৪ সালে পুলিশের বলপ্রয়োগের ঘটনা ১০% বেড়েছে এবং প্রায় এক দশকের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়েছে।

আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, পুলিশের দ্বারা চরম অবহেলা, সহিংসতা এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে। পুলিশের প্রতি যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি দেওয়া হয়, তা দেখায় যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা আইনের ঊর্ধ্বে রয়ে যায়।”

ইনকোয়েস্টের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে পুলিশ হেফাজতে বা পুলিশের সংস্পর্শে আসার পর ১,৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এই বছরের শেষের দিকে একটি নতুন আইন আনা হবে, যেখানে কোনো ফায়ারআর্ম অফিসার কাউকে গুলি করে হত্যা করলে তার পরিচয় গোপন রাখা হবে, যদি না সে দোষী সাব্যস্ত হয়।

এছাড়া, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এক সাবেক বিচারক ও সাবেক স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড প্রধানের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

এই পর্যালোচনা দেখছে, তদন্তে পুলিশের উপর দোষারোপ বা ‘অবৈধভাবে হত্যা করেছে’ বলার বিষয়টি কঠিন করা উচিত কি না। এটি আরও খতিয়ে দেখছে যে, পুলিশের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার দাবি প্রত্যাখ্যান করা কঠিন করা হবে কি না, এবং কি করে প্রমাণের মানদণ্ডকে বর্তমানে প্রচলিত নাগরিক মানদণ্ড (সম্ভাব্যতার ভারসাম্য) থেকে ফৌজদারি মানদণ্ডে (সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত) উন্নীত করা যায়।

আজেল রডনির মা সুসান আলেকজান্ডার, যার ছেলে ২০০৫ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল, বলেন:

“পুলিশ এবং তাদের প্রতিনিধিরা আবারও পুলিশের জবাবদিহিতা দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যা আমাদের জন্য অপমানজনক।

বরং, যদি তারা পরিবর্তন বাস্তবায়ন এবং আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কথা শোনার জন্য সময় দিত, তাহলে কতগুলো জীবন বাঁচানো যেত এবং কতগুলো পরিবারকে এই কষ্ট থেকে রক্ষা করা যেত!”

ইনকোয়েস্টের পরিচালক ডেবোরা কোলস বলেন:

“এই পর্যালোচনাটি পুলিশের জবাবদিহিতা কমানোর এবং তাদের আইনের ঊর্ধ্বে রাখার এক ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা। পুলিশের হাতে হত্যার লাইসেন্স থাকা উচিত নয়। তারা যে পরিবর্তন চাচ্ছে, তা কার্যত তাদের এই ক্ষমতা প্রদান করবে।”

সরকার বিশ্বাস করে যে এটি একটি ভারসাম্যের বিষয়—অফিসারদের যাতে আইনের প্রয়োগে আস্থা থাকে, তা নিশ্চিত করা, আবার একই সঙ্গে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা যে পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

হার্ভার্ডের ১০৩টি ফ্রি কোর্স

অনলাইন ডেস্ক

অভিবাসীদের জন্য স্বাস্থ্য কর বাড়ালো যুক্তরাজ্য

প্রধানমন্ত্রী নিজের দায় প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিবের উপর চাপিয়েছেন বলে মনে করেন রাজনীতিবিদেরা

নিউজ ডেস্ক