যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার কারণে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাই উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করা উচিত হবে না বলে মত দিয়েছে মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি৷
২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার পর মঙ্গলবার ১৪ মে দেশটির সরকারের পরামর্শদাতা মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে৷
নিয়মিত এবং অনিয়মিত মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী বসবাস করছেন৷ আর এই ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজনৈতিক আলোচনায় প্রাধান্য পেয়ে আসছে৷ ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ব্রেক্সিট গণভোটেও এটি ছিল অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়৷
পরিচর্যাকর্মী (কেয়ার স্টাফ) এবং কম বেতনের কর্মীদের পাশাপাশি ব্রিটেনে উচ্চশিক্ষায় আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷ এমনকি, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সুনাক প্রশাসন৷
মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষায় যুক্তরাজ্যে আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসার ওপর সরকার বিধি-নিষেধ আরোপের পর আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য অগ্রিম জমা দেয়া অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে৷
২০২৩ সালের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জমা দেয়া অর্থের পরিমাণ এবার ৬৩ শতাংশ কমেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কমিটি৷
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু বিভাগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে কর্মীরা চাকরি হারাতে পারেন, এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে৷
অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ থেকে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন পর্যন্ত বিশ্বের অনেক উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশটিতে৷ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাজ্যের জন্য গৌরবের প্রতীক হিসাবেও দেখা হয়৷ দেশটির ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহিত করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়৷ এ কারণে অনেক বিশ্ব নেতারাও ব্রিটিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন৷
ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের দাবি, অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার নামে যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় আবেদন করছেন কিংবা অন্য উপায়ে যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন৷ রাজনীতিবিদদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটিকে দায়িত্ব দেয় সরকার৷
সোমবার ১৩ মে সুনাকের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী এস্থার ম্যাকভি বলেন, কিছু ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ‘‘শিক্ষার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অভিবাসন বিক্রি করছে৷’’
মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া সুনাকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকার প্রতিবেদনটি বিবেচনা করবে এবং প্রতিক্রিয়া জানাবে৷
তবে সুনাকের ওই মুখপাত্র উদ্বেগ জানিয়ে আরো বলেন, উচ্চশিক্ষায় আসা ৪০ শতাংশেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা হয় কাজ করছেন না বা স্নাতক হওয়ার পর বছরে ১৫ হাজার পাউন্ডের নিচে আয় করছেন৷
কিন্তু মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি বলছে, উচ্চশিক্ষার জন্য পাওয়া ভিসার অপব্যবহারের কোনো প্রমাণ তারা পাননি৷
ভারত, নাইজেরিয়া, চীন এবং পাকিস্তান—এই চারটি দেশ থেকেই মূলত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় আসেন৷ যা দেশটিতে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অন্তত ৭০ ভাগ৷
ব্রিটিশ ব্যবসায়িক লবি গ্রুপ সিবিআই জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশটির বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের অন্যতম৷
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
১৬ মে ২০২৪