চলতি বছরের গ্রীষ্মে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে প্রথমে রেকর্ড মাত্রায় উষ্ণতা দেখা গেছে। তাপপ্রবাহের পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের কারণেও সাধারণ মানুষের দুর্দশা বেড়ে চলেছে।
আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও। আর সেজন্য অংশত দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, যা মশার বিস্তারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুর বিস্তার পুরো পৃথিবীজুড়েই বাড়ছে। ২০০০ সালে যত মানুষ মশাবাহিত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বর্তমান সময়ে সেই সংখ্যা আটগুণ বেড়েছে বলে তথ্যে জানা যায়।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা (ইউকেএইচএসএ) সতর্ক করেছে, ক্রমবর্ধমান দীর্ঘ গ্রীষ্মগুলি ব্রিটেন সহ সমস্ত ইউরোপে মশা বাহিত রোগ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
টাইগার মশা, যা বেশ কয়েকটি মারাত্মক “গ্রীষ্মমন্ডলীয়” রোগ সংক্রমণ করে বলে জানা যায়। প্যারিসে গত সপ্তাহে কিছু অঞ্চলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালানো হয়েছে। কারণ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গরম আবহাওয়া মশা প্রজননের জন্য উত্তম বিধায় ইউরোপ জোরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবের কারণ হতে পারে।
ডেঙ্গুর ভাইরাল সংক্রমণ ইতিমধ্যে ফ্রান্সের দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়েছে। গত দু’বছর ধরে ৫০ টিরও বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান ফ্রান্সে পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে ব্রিটিশ একটি পরিবারও ছিল যারা নিস অঞ্চলে ছুটিতে ছিলেন।
ব্রিটেনে, বেশ কয়েকটি প্রাপ্তবয়স্ক টাইগার মশা রেল টার্মিনাল, বন্দর এবং মোটরওয়ে পরিষেবা স্টেশনগুলির আশেপাশে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানায় ইউকেএইচএসএ।
ইউকেএইচএসএর চিফ মেডিকেল এনটমোলজিস্ট জোলিয়ন মেডলক বলেন, ” গ্রীষ্মকাল অতিরিক্ত উষ্ণ এবং দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে টাইগার মশা বা অন্যান্য রোগবাহী মশার আবির্ভাবের সম্ভাবনা রয়েছে।”
লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের বৈজ্ঞানিক মডেলিংয়ে বলা হয়েছে, টাইগার মশা ৫০ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ড এবং সাউথ ওয়েলসের বেশিরভাগ অংশে প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি গ্রীষ্মে লন্ডনে এটি প্রচুর হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বিস্তারকে ধীর করার জন্য ইউকেএইচএসএ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মশার আবাস চিহ্নিত করে স্পট ধ্বংসে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে জানায় যুক্তরাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে ৩৬ টি প্রজাতির মশা রয়েছে তবে তারা প্রানঘাতী নয়। তবে, ২০১০ সালে টেমস মোহনার কয়েকটি অঞ্চলে কুলেক্স মশার প্রজননস্থল খুঁজে পাওয়া যায়। যারা ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী নীল ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম। নীল ভাইরাস সাধারণত ফ্লুর মতো লক্ষণ নিয়ে আসে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কে সংক্রমিত হতে পারে।
২০২৩ সালে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে চরম আবহাওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অনেক বিজ্ঞানী এমনটা দাবি করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে মশাবাহিত রোগ ইউরোপে থাবা বসানোর কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এম.কে
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩