TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইংলিশ চ্যানেল ডিঙ্গি ট্র্যাজেডির অনেক ভুক্তভোগীকে বাঁচানো যেতঃ ক্র্যানস্টন তদন্ত

যুক্তরাজ্যে ২০২১ সালে ডুবে মারা যাওয়া ২৭ জনের অনেকেই বেঁচে থাকতে পারতেন যদি উদ্ধারকারী দল আরও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সন্ধান চালাতো, এই কথাটি একটি স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

চ্যানেলে অভিবাসী বহনকারী ডিঙ্গি নৌকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনায় প্রাণ হারানো অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হতো যদি উদ্ধারকারী বাহিনী আরও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সন্ধান চালাতো, এমনটাই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষের আইনজীবীরা।

স্বাধীন ক্র্যানস্টন তদন্ত—যা গণডুবির ঘটনার পটভূমি যাচাই করছে—সে তদন্তের শুনানিতে পানিতে টিকে থাকার বিশেষজ্ঞ একজন সাক্ষ্য প্রদান করেন।

প্রফেসর মাইকেল টিপটন তদন্ত কমিটিকে বলেন, নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর অনেক মানুষ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারতেন এবং কতক্ষণ পর্যন্ত কিছু যাত্রী পানিতে টিকে থাকতে পারতেন তা ব্যাখ্যা করেন।

ধারণা করা হয়, ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে ১৩ জন নারী ও ৮ শিশু সহ মোট ৩৩ জন ছিল। নিশ্চিতভাবে ২৭ জনের মৃত্যু হয়, ৪ জন নিখোঁজ থেকে যায়, এবং ২ জন প্রাণে বেঁচে যান।

টিপটন জানান, ডিঙ্গি উল্টে যাওয়ার চার ঘণ্টারও বেশি সময় পরও ১৫ জন যাত্রী জীবিত থাকতে পারতেন। ওই দিন সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ৭.২৬-এ। দুর্ঘটনাগ্রস্ত নৌকাটি থেকে প্রথম বিপদ সংকেত পাঠানো হয় রাত ১টার কিছু পর এবং শেষ সংকেত আসে রাত ৩.১১-এ। ধারণা করা হয়, যাত্রীরা রাত ৩.১২ বা ৩.১৩-এ পানিতে পড়েন।

টিপটন বলেন, রাত ৩.২৪-এ ডিঙ্গির অধিকাংশ যাত্রী এখনও জীবিত ছিলেন এবং ভোর পর্যন্ত হয়তো ৮, ১০ বা ১৫ জন বেঁচে থাকতে পারতেন। তদন্তে দেখানো কোস্টগার্ডের লগ অনুযায়ী, সকাল ৬টার ঠিক আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভ্যালিয়ান্ট নামক উদ্ধারকারী নৌকাটিকে তল্লাশি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এটি সকাল ৭.০৩-এ তীরে ফিরে আসে। কিন্তু এতে কেবল অন্য নৌকাগুলো থেকে উদ্ধার করা ৯৮ জন যাত্রী ছিল, গণডুবির ঘটনাস্থল থেকে কেউ ছিল না।

প্রাথমিকভাবে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডিঙ্গির যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়েছে কিনা, কারণ এটি আরেকটি পৃথক ডিঙ্গির ঘটনার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছিল।

মাত্র দু’জন জীবিত বেঁচে থাকা যাত্রীদের একজন, ইসা মোহাম্মদ ওমর, তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি সেইসব মানুষদের কণ্ঠস্বর, যারা মারা গেছেন।”

তিনি বর্ণনা করেন, কীভাবে নৌকায় সবাই মরিয়া হয়ে সাহায্যের জন্য ফোন করছিলেন, ঠিক তখনই নৌকাটি উল্টে যায়।

“আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত ঠান্ডা। আমরা যখন সমুদ্রে পড়ে গেলাম, সবাই চিৎকার করছিল। আমাদের সবার মনে হচ্ছিল, আমরা মরতে যাচ্ছি।”

মারিয়া থমাস, যিনি ডানকান লুইস সলিসিটরস থেকে ২১টি শোকাহত পরিবার ও একজন জীবিত ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, তিনি বলেন:

“আমরা আজ শুনলাম , যদিও কেউ কেউ পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ঠান্ডা পানির শকের’ কারণে মারা যেতে পারেন, তবে ‘চার্লি’ নামে পরিচিত ছোট নৌকাটির বহু যাত্রী নৌকাটি উল্টে যাওয়ার অনেক ঘণ্টা পরও জীবিত ছিলেন।

সুতরাং, এটা সম্ভব, বরং সম্ভাব্য ছিল, যে ভ্যালিয়ান্ট সকাল ৭.০৩-এ ৯৮ জনকে উদ্ধার করার পরও যদি আরও উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হতো, তবে সেই রাতে আরও অনেককে বাঁচানো যেত।”

একজন হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন:

“এই মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তিদের, বিশেষ করে নিহতদের পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।

আমরা স্বাধীন তদন্তকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি এবং এর সুপারিশগুলোর যথাযথ বিবেচনা করব। এর বেশি মন্তব্য করা অনুচিত হবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৯ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

পরিবার নিতে চাওয়া প্রবাসীদের দুঃসংবাদ দিল যুক্তরাজ্য

ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা এখনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছেঃ জারাহ সুলতানা

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অভাবে ঝুঁকির মুখে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো