যুক্তরাজ্যের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার সতর্ক করে বলেছেন, অভিবাসন, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বৈষম্য জনগণের মধ্যে রাজনীতিকদের ওপর আস্থা হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে, যা দেশজুড়ে দাঙ্গা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কেবিনেট বৈঠকের সরকারি সারাংশে উঠে আসে, রেইনার এই ইস্যুগুলোকে সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে একাকীত্ব বেড়ে যাওয়া, অনলাইনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রভাবে সামাজিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে। ডাউনিং স্ট্রিট জানায়, অভিবাসন ইস্যুটিও জনগণের মাঝে উদ্বেগের অন্যতম উৎস, যেখানে সরকারকে নিজের পক্ষে কাজ করছে বলে তারা আর মনে করে না।
বিশেষ করে গত গ্রীষ্মে সাউথপোর্টে তিন শিশুর হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যে জাতিগত সহিংসতা ও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে সামাজিক অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এতে মিথ্যা ডানপন্থী প্রচারণা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। রেইনার উল্লেখ করেন, গত বছরের দাঙ্গাগ্রস্ত ১৮টি এলাকার মধ্যে ১৭টি এলাকাই ছিল দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, ব্রিটেন একটি সফল বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় দেশ হলেও সরকারকে জনগণের উদ্বেগের বাস্তব সমাধান এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্রও জানান, গত এক দশকে বেড়ে চলা অভিবাসন, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সামাজিক সংহতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
রেইনারের নেতৃত্বাধীন ‘সামাজিক সংহতি উন্নয়ন প্রকল্প’ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। “নেইবারহুড প্ল্যান” নামক এই প্রকল্পে আগামী ১০ বছরে ৭৫টি অঞ্চলে ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পূর্ব ইংল্যান্ডের এসেক্সের এপিংয়ে একটি আশ্রয়প্রার্থী হোটেলকে ঘিরে চলমান বিক্ষোভ। যেখানে সম্প্রতি পুলিশ হামলার শিকার হয়েছে। কুখ্যাত কট্টরপন্থী টমি রবিনসন রোববার সেখানে সহস্রাধিক সমর্থক নিয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী অবকাশে থাকলেও এমন জরুরি পরিস্থিতিতে তথ্য জানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গত বছর গ্রীষ্মকালীন দাঙ্গার সময় কেয়ার স্টারমার ছুটি বাতিল করেছিলেন।
এই পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে, কারণ রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ এই অস্থিরতা ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে ‘সমাজব্যবস্থার পতন’ নিয়ে নতুন বার্তা দিচ্ছেন। তিনি সম্প্রতি বলেন, “ব্রিটেন এখন গৃহযুদ্ধের প্রান্তে পৌঁছে গেছে।”
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, কেবিনেট আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল বাস্তব সংকট এবং জনগণের দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস দূর করে সমাজে টেকসই পরিবর্তন আনা। এর অংশ হিসেবে একটি স্বাধীন কমিশন গঠিত হয়েছে যা সম্প্রদায়ের বিভাজন নিরসনে কাজ করবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৩ জুলাই ২০২৫