২০২৪ সালে ইংল্যান্ডে পানিদূষণ রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে বলে জানিয়েছে এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি। ২০২৩ সালে যেখানে দূষণের ঘটনা ছিল ২,১৭৪টি, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮০১টিতে। এর মধ্যে ৭৫টি ঘটনায় জলজ জীববৈচিত্র্য, পানীয় জলের উৎস ও জনস্বাস্থ্যের উপর “গুরুতর বা স্থায়ী” ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০% বেশি।
পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অবহেলা দায়ী। তারা পানি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পরিবেশ সচিব স্টিভ রিড এই পরিসংখ্যানকে “লজ্জাজনক” বলে উল্লেখ করে বলেন, বছরের পর বছর বিনিয়োগ কম থাকায় এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে এমন ভয়াবহ দূষণ ঘটছে। অপরদিকে, ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ ওয়াটার ইউকে স্বীকার করেছে যে কিছু কোম্পানির কর্মদক্ষতা অত্যন্ত দুর্বল ছিল।
২০১৬ সালের ভিত্তি ধরে ২০২৫ সালের মধ্যে পানি দূষণ ৪০% কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ২০২৪ সালে এই মাত্রা এজেন্সির নির্ধারিত লক্ষ্য থেকে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। শুধু তিনটি কোম্পানি – থেমস ওয়াটার (৩৩), সাউদার্ন ওয়াটার (১৫) এবং ইয়র্কশায়ার ওয়াটার (১৩) – মিলে সবচেয়ে গুরুতর দূষণের বেশিরভাগ ঘটনার জন্য দায়ী।
রিভার অ্যাকশন-এর সিইও জেমস ওয়ালেস বলেন, “এটি কেবল নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতা নয়, এটি জাতীয় লজ্জা। থেমস ওয়াটারকে স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে নেওয়া উচিত।”
এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, তাদের বার্ষিক ৪,০০০ পরিদর্শনের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো তাদের পারমিট লঙ্ঘন করেছে। এর অনেকগুলো ঘটনার জন্য অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতকে দায়ী করা হলেও, পারমিট লঙ্ঘন আইনি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির প্রধান স্যার জিওফ্রে ক্লিফটন-ব্রাউন বলেন, “নিয়ন্ত্রকরা মামলা মোকাবিলা করতেই হিমশিম খাচ্ছে। তারা কোম্পানিগুলোর অবৈধ কর্মকাণ্ড থামাতে পারছে না।”
কমিটি জানিয়েছে, এই সমস্যার মূল কারণ হলো — এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি ও অফওয়াট তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে দীর্ঘস্থায়ী অবহেলা দেখা গেছে। বর্তমানে এই গতিতে চললে পুরো পানি নেটওয়ার্ক বদলাতে ৭০০ বছর সময় লাগবে।
ওয়াটার ইউকে দাবি করেছে, বিনিয়োগ থামিয়ে রাখা হয়েছিল কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পানি বিল কম রাখতে চেয়েছিল। তবে এখন ৫ বছরের জন্য রেকর্ড £১০৪ বিলিয়ন বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সাধারণ গ্রাহকদের বিল বছরে গড়ে £১২৩ বাড়তে পারে। সাউদার্ন ওয়াটার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি হতে পারে বছরে £২২৪ পর্যন্ত।
স্যার জিওফ্রে জানান, শিল্প খাত নিজেরাই দায়ী। কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর মুনাফা বিনিয়োগের বদলে ঋণ পরিশোধ ও শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করেছে, যার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ জনগণ।
আগামী সোমবার ওয়াটার কমিশনের প্রধান স্যার জন কানলিফ পানি শিল্পের সংস্কার নিয়ে তার সুপারিশ প্রকাশ করবেন। প্রাথমিক প্রতিবেদনেই তিনি এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি, ডেফরা ও অফওয়াটকে “গভীর, জটিল এবং পরস্পর সংযুক্ত ব্যর্থতা”র জন্য দায়ী করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের এমন এক নিয়ন্ত্রক দরকার যারা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো হস্তক্ষেপ করতে পারে – যেমনটা ব্যাংকিং খাতে হয়।” তার সুপারিশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পূর্ণ সংস্কার বা পুনর্গঠনের প্রস্তাব আসতে পারে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৮ জুলাই ২০২৫