10.9 C
London
May 18, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইইউ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ‘যুব অভিজ্ঞতা’ স্কিম ১২ মাসের ওয়ার্ক ভিসা চালুর সম্ভাবনা

ব্রেক্সিটের পর নতুন করে ইউকে-ইইউ সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে আলোচনায় বড় ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যার আওতায় হাজার হাজার তরুণ ইউরোপীয় নাগরিক যুক্তরাজ্যে বাস ও কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। যার ফলে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিকল্পনায় ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় নাগরিকদের মুক্তভাবে ভ্রমণ ও কাজের সুযোগ আবারও সৃষ্টি হচ্ছে।

একটি প্রস্তাবিত স্কিমে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় নাগরিকদের মুক্তভাবে একে অপরের দেশে ভ্রমণ ও কাজ করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি ইউকে-ইইউ প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও অভিবাসন-ভিত্তিক একটি নতুন চুক্তি আলোচনার মূল চাহিদা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো এখন ১২ মাস মেয়াদি সীমিত ওয়ার্ক ভিসায় সম্মত হতে পারে, যেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যার কোটা ও কোন খাতে ইউরোপীয় নাগরিকরা কাজ করতে পারবে তা নির্ধারিত থাকবে।

তবে ইইউ যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবেচনাধীন “একজন আসলে একজন যাবে” নীতির প্রতিও খোলা মনোভাব দেখাচ্ছে বলে জানা যায়।

ইইউ সূত্র জানায়, স্কিমটির নাম হবে “ইয়ুথ এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রাম”, যেন এটি কোনো অভিবাসনপথ আবার চালু করছে এমন ভুল ধারণা তৈরি না হয়।

শুক্রবার ‘ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিম’ সম্পর্কে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেন, “উভয় পক্ষই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে, যা যেকোনো আলোচনার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার।”

ব্রেক্সিটপন্থী ও সাবেক মন্ত্রী স্টিভ বেকারও এই স্কিমের পক্ষে মত দিয়েছেন এবং বলছেন এটি একটি “ভালো উদ্যোগ।”

তবে ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান এই পুরো ইস্যুকে “রেড হেরিং” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

২০২৪ সালের এপ্রিলে ইইউ তরুণদের জন্য ৪ বছর পর্যন্ত একে অপরের দেশে কাজ বা পড়াশোনার সুযোগ দিয়ে একটি ‘ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিম’ প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু তা লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলই প্রত্যাখ্যান করে।

এক বছর আলোচনার পর, সূত্র বলছে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইইউ দেশের কাছে ‘ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিম’ এখন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যে তারা ছাড় দিতেও প্রস্তুত।

একটি সূত্র জানায়, এক বছরের ভিসা এবং পরবর্তীতে এক বা দুই বছরের এক্সটেনশনের অপশন রাজনৈতিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই ১২টি দেশের সঙ্গে একটি যুব মোবিলিটি স্কিমে অংশ নিচ্ছে, যার আওতায় মানুষ ২ বা ৩ বছরের জন্য ইউকে-তে কাজ করতে পারে। হোম অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ২৩,০০০ তরুণ যুক্তরাজ্যে এসেছে, যার মধ্যে ৯,৯০০ জন অস্ট্রেলিয়া থেকে।

পরিবেশ সচিব স্টিভ রিড নিশ্চিত করেছেন, সরকার ফ্রি মুভমেন্ট বিষয়ে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি ভাঙবে না। টাইমস রেডিওকে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে সিঙ্গেল মার্কেট, কাস্টমস ইউনিয়ন বা ফ্রি মুভমেন্টে আমরা ফিরছি না।”

যুক্তরাষ্ট্রে কোষাধ্যক্ষ স্কট বেসেন্টের সঙ্গে বৈঠকের আগে চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভস বলেন, যুক্তরাজ্যের ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক “সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ”।

জার্মান রাষ্ট্রদূত মিগুয়েল বার্গার বলেন, ইউকে-ইইউ নেতাদের সাম্প্রতিক বৈঠকের পর তিনি এই চুক্তি নিয়ে “খুবই আশাবাদী”। তিনি বলেন, “এটি কম আয়ের পরিবারের তরুণদের বিদেশে কাজ, ভাষা শেখা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেবে, এবং আমরা চাই এটি দুই দিকেই কাজ করুক।”

তিনি আরও বলেন, “১৯ মে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য ইউকে-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রস্তুতি চলছে।”

স্টিভ বেকার বলেন, “ইউরোপীয় তরুণদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সীমিত স্কিম ভালো উদ্যোগ হবে এবং এটি কখনোই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফ্রি মুভমেন্টের সমান নয়।”

তবে তিনি সতর্ক করেন, ইউকে যদি আবার ইইউর খাদ্যমান ও পণ্যের নিয়ম মেনে চলে, তাহলে এটি মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকিতে ফেলবে।

তিনি বলেন, “আমরা যখন এই ‘রেড হেরিং’ নিয়ে তর্ক করছি, তখন ইউকে এমন এক পথে হাঁটছে যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চুক্তিকে লঙ্ঘন করবে এবং আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা নষ্ট করবে। অথচ ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি সেখান থেকেই আসবে।”

লেবার ও ইইউ যৌথভাবে সাতটি স্তম্ভে কাজ করছে, যার ওপর ভিত্তি করে একটি “কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং” ঘোষণা দেয়া হবে এবং তারপর বিস্তারিত আলোচনা হবে।

এই সাতটি ক্ষেত্র হচ্ছে: প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, কার্বন প্রাইসিং, অভিবাসন, ইয়ুথ এক্সপেরিয়েন্স, জ্বালানি, মৎস্য এবং আরও কিছু বিষয়, যদিও কিছু পক্ষ এই আলোচনাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন বলে জানিয়েছে।

কিছু ইইউ সদস্য রাষ্ট্র চায় যুক্তরাজ্য আবার Erasmus+ প্রোগ্রামে ফিরুক এবং এমন একটি চুক্তি হোক যাতে একে অপরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হোম ফি’ দিয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকে। তবে অতীতে ইউরোপীয় ছাত্রদের তুলনায় ব্রিটিশ ছাত্রদের সংখ্যা কম থাকায় এটি ইউকে-র জন্য হতে পারে একটি অসম চুক্তি।

ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তির আওতায় গঠিত একটি ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থা সরকারকে আরও অগ্রসর হয়ে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে—যেমন: ব্রিটিশ বীজ আলুর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, ওষুধের ব্যাচ টেস্টিং বাধা এবং পেশাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি সংক্রান্ত চুক্তি।

ডোমেস্টিক অ্যাডভাইসরি গ্রুপ আরও বলছে, সংগীতশিল্পী ও শিল্পীদের ট্যুর বাধা দূর করতে হবে এবং পশু চিকিৎসা ও রাসায়নিক ব্যবহারে যৌথ নিয়ন্ত্রণে ফিরে যেতে হবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

২০২৩ সালের জন্যে লন্ডন বিশ্বের সেরা শহর মনোনীত

ভিসা নিয়ে বড় ঘোষণা দিলো যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্য সরকার আগামী মাসে হতে ই-ভিসা ব্যবস্থা চালুর কার্যক্রম স্থগিত করবেঃ রিপোর্ট