গাজায় বর্বর হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার তীব্র হামলা চালিয়েছে উত্তর গাজায়। বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় এক মসজিদ। দফায় দফায় আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে। যুদ্ধের ৬২ দিনের মাথায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৭৭ জনে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই মৃত্যু হয়েছে ৩৫০ জনের।
ছোট্ট অবরুদ্ধ জনপদে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান এ হত্যাযজ্ঞে শুধু গাজা নয়, হাঁপিয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ব। এতদিন চুপ থাকলেও নৃশংসতা থামাতে এবার ইসরাইলের গলা চেপে ধরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) দেশগুলো। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরদিনই এ পদক্ষেপ নিল ইইউ। একই পথে পা রাখল ইইউ দেশ বেলজিয়াম।
বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু বলেছেন, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলাকারী ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা বেলজিয়ামে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হবে। ইইউর আরেক দেশ ইসরাইল মিত্র জার্মানিও নাম লেখাচ্ছে এই তালিকায়। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ইইউকেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা প্রতিরোধে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চলে সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর প্রেক্ষিতে জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক (এসপিডি) পার্লামেন্টারি গ্রুপের পররাষ্ট্র নীতির মুখপাত্র নিলস স্মিড রয়টার্সকে বলেছেন, ইইউ যদি সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয় তবে এটি ভালো হবে। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেবাস্তিয়ান ফিশারও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় পর্যায়েও এই বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ফিশার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছেন, আগামী সোমবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এদিকে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উদ্দেশে নিজের হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী কূটনৈতিক হাতিয়ার জাতিসংঘ সনদের ৯৯ ধারা প্রয়োগ করলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এই ক্ষমতাবলেই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহ্বান করেছেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গুতেরেসকে ‘বিশ্ব শান্তির জন্য বিপদ’ হিসাবে অভিহিত করেছে ইসরাইল। তেল আবিবের বক্তব্য, হামাসকে সমর্থন করছেন মহাসচিব।
বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা এক চিঠিতে গুতেরেস বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি হুমকি মনে করলে মহাসচিব যে কোনো বিষয়ের প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
গুতেরেস ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম এ ধারাটি প্রয়োগ করলেন। চিঠিতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় প্রতিহত করার জন্য চাপ প্রয়োগ এবং মানবিক যুদ্ধবিরতির আবেদন জানানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে এ পদক্ষেপটি গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সূত্রঃ আলজাজিরা
এম.কে
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩