গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন ব্রিটিশ নাগরিকসহ সাতজন ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। গতকাল বুধবার তিন বিরোধী দল এবং শাসক কনজারভেটিভ পার্টির কয়েকজন এমপি বলেছেন, ব্রিটিশ সরকারের অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিও ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি স্থগিতের দাবিকে সমর্থন করে বলেছে যে, এই সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য পার্লামেন্টের উচিত ইস্টার বিরতি প্রত্যাহার করা।
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি বলেছে, আইনজীবীরা যদি দেখেন যে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে তাহলে সরকারের অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করা উচিত। লেবার পার্টির পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে আমার গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।’
জনমত জরিপ অনুসারে, এ বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে লেবার পার্টির।
ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সাবেক তিনজন বিচারপতি। ১৭ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে সই করেছেন ৬০০ জনের বেশি আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করলে যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আসতে পারে।
গতকাল বুধবার ঋষি সুনাকের কাছে লেখা এই চিঠিতে বলা ছিল—ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার চুক্তি যুক্তরাজ্যকে গণহত্যার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনেও জড়িত করতে পারে। আন্তর্জাতিক পরিসরে অন্যায় কাজে সহায়তা দেওয়াকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আইন।
গত সোমবার গাজার দেইর আল–বালাহ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) ত্রাণকর্মীদের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ যায় সাতজনের। তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন।
গতকাল বুধবার ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেস অভিযোগ করে বলেন, গাজায় ত্রাণকর্মীদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত সোমবারের হামলায় সাত কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনাটি ভুলে হয়নি। ইসরায়েলি বাহিনীকে তাদের গতিবিধি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক এবং অনিচ্ছাকৃত’ বলে দাবি করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ হামলার ব্যাপারে একটি স্বাধীন তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গাজা পরিস্থিতি ক্রমে অসহনীয় হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ ছিলেন। ব্রিটেন এ ঘটনায় একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ স্বাধীন তদন্তের দাবি করছে বলে জানান তিনি।
তবে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি অবিলম্বে বন্ধের আহ্বানকে এখনই কার্যকর করার ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি ঋষি সুনাক। তবে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ব্রিটিশ সংবাদপত্র সানকে ঋষি সুনাক বলেন, ‘অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য অত্যন্ত সতর্কতামূলক একটি ব্যবস্থা অনুসরণ করে আসছে। বেশ কিছু নিয়ম, বিধান এবং পদ্ধতি রয়েছে যা আমরা অনুসরণ করব।’
এ সময় তিনি ওই হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।
সূত্রঃ আল জাজিরা
এম.কে
০৫ এপ্রিল ২০২৪