ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছে ইরান। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এ কথা বলেছেন এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা। দক্ষিণ লেবাননে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি একটি স্থল অভিযান চলমান থাকার মধ্যেই এই আশঙ্কার কথা জানালো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছি। ইসরায়েলে সরাসরি সামরিক হামলা ইরানের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনবে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে জানিয়েছে যে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের আশ্রয়ে যেতে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটিই প্রথমবারের মতো এমন সতর্কতা জারি হলো।
এর আগে এপ্রিল মাসে ইরান একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। যা ইসরায়েলি বাহিনীর সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটের ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। সেই সময়ও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করেছিল।
ইরান বলেছে, হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর ইসরায়েল ‘ধ্বংস’ হবে। তবে, তেহরান জানিয়েছে তারা সরাসরি সেনা পাঠিয়ে ইসরায়েলকে মোকাবিলা করবে না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার ইরানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনও স্থান নেই যেখানে ইসরায়েল পৌঁছাতে পারবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, ইরানের মুক্তির দিন খুব শিগগিরই আসবে, যত দ্রুত মানুষ ভাবছে তার থেকেও দ্রুত।
ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিশ্বশক্তি এমন সংঘাত এড়াতে চায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বোরিতার সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে আরও কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে নতুন ইউনিট ও ইতোমধ্যে মোতায়েন করা ইউনিটগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার জেরুজালেম ও তেল আবিবে বেসামরিক নাগরিকদের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এতে স্পষ্ট যে হিজবুল্লাহ বা ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা করছে তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ ও স্থল অভিযান পরিচালনার কয়েক ঘণ্টা পর এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় ১০ হাজার সেনার একটি বিভাগ এই অভিযানে অংশগ্রহণ করছে। যদিও কতজন সেনা লেবাননের ভেতরে প্রবেশ করেছে তা স্পষ্ট নয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই অভিযান সীমিত হবে। ইসরায়েল তাদের আশ্বস্ত করেছে যে বড় ধরনের সামরিক অভিযান বা দীর্ঘমেয়াদি দখলদারির কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে ইসরায়েলের পূর্বের অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, তাদের অনেক ছোট আকারের সামরিক অভিযানও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের রূপ নিয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, লেবাননে তাদের লক্ষ্য হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করা। ইসরায়েলি স্থল অভিযান মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন হিজবুল্লাহর উপ-প্রধান।
এম.কে
০১ অক্টোবর ২০২৪