প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে ভূগর্ভস্থ মূল্যবান খনিজ আহরণের প্রচলিত পদ্ধতি টেকসই নয় বলে অভিমত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য রিসাইকেলের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
খনিজ আহরণে নয়, পুনর্ব্যবহারে জোর দেয়ার আহ্বানে বিজ্ঞানীরা ব্যাটারিতে ব্যবহৃত লিথিয়ামসহ স্মার্টফোন তৈরিতে ৩০ ধরনের খনিজ উপাদান ব্যবহার করেন। প্রকৃতিতে এসব খনিজ উপাদান ফুরিয়ে আসছে।
এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০২১ সালে বাতিল করা প্রযুক্তিপণ্যের মোট ওজন ছিল পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টন। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি (আরএসসি) বলছে, খনি থেকে বারবার আহরণ না করে বর্জ্য থেকে কিছু খনিজদ্রব্য পুনর্ব্যবহারে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
বিভিন্ন সময়ে বৈশ্বিক সংঘাতের মুখে মূল্যবান খনিজ পদার্থের সরবরাহ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। আরএসসি দেখিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিকেলের মতো উপাদানের মূল্য বাড়ছে। বিদ্যুত্চালিত গাড়ির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নিকেল।
অন্যদিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। এ রকম উপাদানের মধ্যে রয়েছে এলইডি ও সোলার প্যানেলে ব্যবহৃত গ্যালিয়াম, কাঠ সংরক্ষণে ব্যবহৃত আর্সেনিক, কাচে ব্যবহৃত রূপা, ট্র্যানজিস্টরে ব্যবহৃত ইন্ডিয়াম, ক্যামেরা লেন্সে ব্যবহৃত ইট্রিয়া এবং পেসমেকারে ব্যবহৃত ট্যানটালাম।
রয়াল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক টম ওয়েল্টন বলছেন, ‘প্রযুক্তি ভোগের অভ্যাস এখনো ব্যাপক। এই অভ্যাস আমাদের কিছু মূল্যবান খনিজ উপাদান নিঃশেষ করে ফেলার ঝুঁকির মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।’
প্রতিবছর ই-বর্জ্য তৈরি হওয়ার পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন করে বাড়ছে। অথচ এর ২০ শতাংশেরও কম সংগ্রহ এবং পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। ওয়েল্টন বলছেন, ‘আমাদের প্রয়োজন সরকারের পুনর্ব্যবহার কাঠামোকে ঢেলে সাজানো এবং প্রযুক্তি ব্যবসায় আরো টেকসই উৎপাদনে বিনিয়োগ করা।’
১০টি দেশের ১০ হাজার মানুষের ওপর চালানো এক অনলাইন জরিপে জানা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশই নিজ ব্র্যান্ডের বদলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রযুক্তি ব্র্যান্ডের পণ্য বেছে নেবেন, যদি দেখা যায় ওই প্রতিষ্ঠানটি টেকসই পন্থায় পণ্য তৈরি করেছে।
জরিপে আরো উঠে এসেছে, নিজ নিজ ই-বর্জ্য নিয়ে কী করা উচিত, তা অনেকেই জানে না। যদিও তারা বাসায় থাকা অব্যবহৃত ডিভাইসের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন।
১১ মে ২০২২
সূত্র: বিবিসি