উত্তর ফ্রান্সে অভিবাসী ক্যাম্পগুলোর ওপর ব্রিটিশ অভিবাসীবিরোধী কর্মীদের হামলাপ্রবণ কর্মকাণ্ড দমনে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ব্যর্থতায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। নয়টি ফরাসি সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা “হিংস্র ও বর্ণবাদী আচরণকে উৎসাহিত করছে” এবং অভিবাসীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
‘রেইজ দ্য কালারস’ নামের ব্রিটিশ সংগঠনটি সম্প্রতি ‘অপারেশন ওভারলর্ড’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নরম্যান্ডি ল্যান্ডিংয়ের নাম অনুসরণ করে। এই গ্রুপের সদস্যরা উত্তর ফ্রান্সের বিভিন্ন সৈকতে গিয়ে অভিবাসীদের হয়রানি, বালিয়াড়িতে লুকানো ডিঙি খুঁজে নষ্ট করা এবং স্থানীয়দের আতঙ্কিত করার মতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। শুক্রবার ফরাসি পুলিশ তাদের কয়েকজনকে আটকও করে— কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিবাসী সহায়তা সংগঠন Utopia 56 জানায়, তারা নিয়মিত এসব গ্রুপের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করছে। কিন্তু তবুও ব্রিটিশ কর্মীদের ফরাসি সৈকতে প্রবেশ ঠেকাতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। সংগঠনটির দাবি, চরম ডানপন্থীদের লাগামহীন তৎপরতা মানবাধিকারের জন্য সরাসরি হুমকি।
রেইজ দ্য কালারস সামাজিকমাধ্যমে দাবি করেছে, তাদের ৫,৫০০ সমর্থক ফ্রান্সে গিয়ে ‘স্টপ দ্য বোটস’ অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত। গ্রুপটি স্ট্যাব-প্রুফ ভেস্ট, ড্রোন, থার্মাল ক্যামেরা, হাই-পাওয়ার টর্চ, এনক্রিপটেড রেডিওসহ সামরিক মানের সরঞ্জাম সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছে এবং নিজেদেরকে “অসামরিক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাহিনী” হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। এক সাবেক সেনা সদস্য তো ফরাসি উপকূলে ২৪/৭ টহলের জন্য সাবেক সেনাদের ডাকও দিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস জানিয়েছে, জনসাধারণের হতাশা তারা বুঝলেও নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হোম সেক্রেটারি অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় বড় ধরনের সংস্কার ঘোষণা করেছেন বলে জানানো হয়। হোম অফিস সূত্র আরও জানায়, ফ্রান্স ছোট নৌকা আটকানোর সক্ষমতা বাড়াতে সামুদ্রিক নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করছে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দুঙ্কির্কে নতুন একটি ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা হয়েছে।
নয়টি সংগঠন—যাদের মধ্যে রয়েছে L’Auberge des Migrants, Utopia 56, Medecins du Monde, Human Rights Observers ও Refugee Women’s Centre—অভিযোগ করেছে, ব্রিটিশ কর্মীদের প্রচারণামূলক পোস্ট, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, অর্থ সংগ্রহের আহ্বান বা কার্যক্রমের কোনোোটিই এখন পর্যন্ত অপসারণ করা হয়নি। এমনকি ফ্রান্সে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করারও কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তাদের মতে, দুই দেশের এই নীরবতা অভিবাসনবিরোধী উগ্রতা ও সহিংসতাকে স্বাভাবিক করে তুলছে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। রেইজ দ্য কালারসকেও প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

