মিশরীয় কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ব্রিটিশ–মিশরীয় লেখক ও গণতন্ত্রপন্থী কর্মী আলা আবদেল ফাত্তাহ যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। এক যুগেরও বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর এই সফরকে তার ব্যক্তিগত জীবনে ও রাজনৈতিক সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আলা আবদেল ফাত্তাহ সেপ্টেম্বরে কারামুক্তি পান, যেখানে তিনি জীবনের বড় একটি অংশ কারাগারে কাটিয়েছেন। সর্বশেষ দফায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল “ভুয়া খবর ছড়ানো”-র অভিযোগে। মিশরে নির্যাতনের বিষয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করাই তার বিরুদ্ধে মামলার ভিত্তি ছিল।
মিশরের সবচেয়ে পরিচিত রাজনৈতিক বন্দিদের একজন হিসেবে পরিচিত আলা আবদেল ফাত্তাহকে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ক্ষমা করে মুক্তি দিলেও, এরপরও তাকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে মুক্তি পাওয়ার পরও কার্যত তিনি ছিলেন এক ধরনের নজরবন্দি অবস্থায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হলে তিনি যুক্তরাজ্যে উড়ে আসেন। সেখানে তিনি ব্রাইটনে বসবাসরত তার ১৪ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন, যা পরিবারটির জন্য আবেগঘন এক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আলা আবদেল ফাত্তাহর মুক্তির পেছনে তার পরিবারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মা লায়লা সাউইফ ছেলের মুক্তির দাবিতে দীর্ঘ অনশন পালন করেন এবং এ সময় তিনি প্রায় দু’বার মৃত্যুর মুখোমুখি হন। পরিবারের এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আলা আবদেল ফাত্তাহর বিষয়টি সরকারের জন্য শীর্ষ অগ্রাধিকার ছিল এবং তার যুক্তরাজ্যে আগমনকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
আলা আবদেল ফাত্তাহর বোন মোনা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শত শত মানুষ,মানবাধিকার কর্মী ও সমর্থকের প্রচেষ্টায় এই দিনটি সম্ভব হয়েছে। তার ভাষায়, দীর্ঘ কষ্টের পর পরিবারটি এখন অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।
মুক্তির পর অক্টোবরে কায়রো থেকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলা আবদেল ফাত্তাহ বলেছিলেন, তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শিখছেন এবং প্রত্যাশার চেয়েও ভালো অবস্থায় আছেন। তার মুক্তি ও যুক্তরাজ্যে আগমনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনের একটি প্রতীকী সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

