করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়ার মাত্র ১০ মাস পরেই কিছু দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়ে গেছে। আর এসব ভ্যাকসিন যারা তৈরি করেছে – সেই কোম্পানিগুলোর নাম এখন লোকের মুখে মুখে ফিরছে।
এর ফলে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন মডার্না, বায়োএনটেক এবং ফাইজারসহ কয়েকটি ভ্যাকসিন উৎপাদক কোম্পানি আগামী বছর সম্ভবত শত শত কোটি ডলার অর্থ আয় করতে চলেছে। কিন্তু এর বাইরে ভ্যাকসিন-উৎপাদকরা ঠিক কত টাকা কামাবে তা এখনো ঠিক স্পষ্ট নয়।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই শত শত কোটি ডোজ টিকা নির্ধারিত মূল্যে কেনার অঙ্গীকার করেছে। তাই আগমিী কয়েক মাসে ফার্মগুলো চেষ্টা করবে কত দ্রুত এই অর্ডারগুলো সরবরাহ করা যায়।
যারা ধনী দেশগুলোর কাছে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে তারা তাদের বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে শুরু করবে। কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকার মত কোম্পানি সবচেয়ে বেশি ডোজ টিকা সরবরাহ করার চুক্তি করলেও – তারা তাদের খরচ উঠিয়ে নিতে পারবে মাত্র – তার চেয়ে বেশি কিছু পাবে না।
প্রথম চুক্তিগুলো অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহের পর পরিস্থিতি কি হবে তার পূর্বাভাস দেয়া মুশকিল।
এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, যেমন – ভ্যাকসিন নেবার পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন স্থায়ী হবে, কতগুলো টিকা সাফল্য পাবে, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা কত সুষ্ঠুভাবে কাজ করবে। তাই মুনাফা করার সুযোগ খুবই সাময়িক হবে বলে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, এই ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়ায় যেভাবে অর্থসংস্থান করা হয়েছে এবং যতগুলো ফার্ম এই উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে – তাতে বড় অংকের মুনাফা করার সুযোগ হয়তো খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না।
বিভিন্ন দেশের সরকার এবং দাতারা টিকা তৈরি এবং তার পরীক্ষার প্রকল্পগুলোতে কোটি কোটি পাউণ্ড পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে। গেটস ফাউণ্ডেশনের মত দাতব্য সংস্থাগুলোও এতে অর্থ-সহায়তা দিয়েছে, এমনকি মার্কিন কান্ট্রি মিউজিক তারকা ডলি পার্টন এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা-র মতো অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অর্থ দিয়েছেন।
বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বিশ্লেষণকারী কোম্পানি এয়ারফিনিটি বলছে, সব মিলিয়ে সরকারগুলো দিয়েছে ৬৫০ কোটি পাউন্ড। এ ছাড়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে প্রায় ১৫০ কোটি পাউণ্ড। কোম্পানিগুলো নিজেরা বিনিয়োগ করেছে মাত্র ২৬০ কোটি পাউণ্ড – তবে এর মধ্যে অনেকে আবার বাইরের তহবিলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
অতীতে দেখা গেছে, বিশেষ করে জরুরি স্বাস্থ্য সংকটের সময় টিকা তৈরি করাটা খুব একটা লাভজনক হয়নি।
কারণ এই টিকা উদ্ভাবন করতে অনেক সময় লাগে, তা ছাড়া এটা যে কাজ করবে তার নিশ্চয়তাও কম। দরিদ্র দেশগুলোয় বিপুল পরিমাণ টিকা সরবরাহ করা হয়, কিন্তু তাদের উচ্চ মূল্য দেয়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই।
তাছাড়া টিকা দিতে হয় মাত্র একবার কি দু’বার। অন্যদিকে যেসব ওষুধের চাহিদা ধনী দেশগুলোতে বেশি এবং যেগুলো প্রতিদিন নিতে হয় – তা উৎপাদন করে অর্থ আয়ের সুযোগ অনেক বেশি। তাই বলা হচ্ছে, যতো বেশি কার্যকর এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে, তা ততই লাভজনক হবে।
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন, এবং যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রাজেনেকা (যারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানির সাথে কাজ করছে) – তারা তাদের উৎপাদনমূল্যটুকু পুষিয়ে যাবে এমন দামে ভ্যাকসিনটি বিক্রি করার কথা বলেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এখন প্রতিটি টিকা ৪ ডলার বা ৩ পাউণ্ড দামে বিক্রি করছে – যা সবচেয়ে সস্তা করোনাভাইরাসের টিকার মধ্যে ধরা চলে।
মডার্না তাদের টিকার যে দাম ধার্য করেছে তা অনেক বেশি – প্রতি ডোজ ৩৭ ডলার পর্যন্ত। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই ফার্মের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছু মুনাফা করা। অন্যদের মূল্যও যাই থাকুক না কেন, পরে যখন অনেক কোম্পানির ভ্যাকসিন বাজারে আসবে তখন দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৪ ডিসেম্বর ২০২০
এনএইচ