12.6 C
London
October 4, 2025
TV3 BANGLA
শীর্ষ খবরসারাদেশ

কাপড়ের দোকানি থেকে ১ হাজার ৫০ কোটির মালিক ‘গোল্ডেন মনির’

নাম মনির হোসেন। কিন্তু নামের সঙ্গে টাইটেল জুড়ে হয়ে গেছেন ‘গোল্ডেন মনির’। কাপড়ের দোকানের সামান্য একজন বিক্রয়কর্মী থেকে এখন তিনি এক হাজার ৫০ কোটি টাকার মালিক।

 

৯০ দশকের দিকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিল মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির। পরে নিজেই ক্রোকারিজ পণ্যের দোকান দিয়ে বসেন।

ওই ব্যবসায় খুব বেশি লাভ করতে না পেরে স্বর্ণের দোকান দেন তিনি।

 

লোভ-লালসায় মগ্ন হয়ে পাশাপাশি যুক্ত হন লাগেজ ব্যবসায় (ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি)। বিভিন্ন অবৈধ পণ্যের চোরাচালানীর একপর্যায়ে স্বর্ণ চোরাচালানী কারবারে যুক্ত হন তিনি। রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। মানুষ জেনে যায় তার ব্যবসার রহস্য। স্বর্ণ চোরাকারবারী হিসেবেই মানুষ তাকে চিনতে থাকে। মানুষের মুখে মুখেই তার নাম মনির থেকে হয়ে ওঠে ‘গোল্ডেন মনির’।

 

শুধু তাই নয়, চোরাকারবারী বাধামুক্ত করতে তিনি আশ্রয় নেন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়। বনে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। জমি-প্লট দখলে মগ্ন হয়ে অবৈধ অর্থে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা, (ডিআইটি প্রজেক্ট) নিকুঞ্জ, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জে দুই শতাধিক প্লট ও বাড়ি নিজের করে নেন। শুধু বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে তার ৩০টিরও বেশি প্লট রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সূত্র।

 

নিজের বসবাসের জন্য ডিআইটি প্রজেক্টে নির্মাণ করেছেন ৬তলার একটি আলিশান বাড়ি। বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা ডুপ্লেক্স এবং ওপরের বাকি ফ্লোরগুলো তিনি ভাড়া দেন। যদিও করোনাকালে ভাড়াটিয়া সব চলে গেছেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, শনিবার (২১ নভেম্বর) ১১টার এমিরেটস এয়ারলাইনসের (EK-585) ফ্লাইটে মনিরের দুবাই যাওয়ার কথা ছিলো।

 

গোল্ডেন মনিরের বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক থাকার তথ্য পায় র‌্যাব। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) শেষ রাত থেকে শনিবার (২১ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত তার মেরুল বাড্ডার বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১টি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, ৬০০ ভরি স্বর্ণ (আট কেজি), ১০টি দেশের মুদ্রা ও এক কোটি নয় লাখ টাকাসহ তাকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

 

র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোল্ডেন মনির হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানের অবৈধ টাকা ঢাকতে আয়ের উৎস হিসেবে রাজধানীর বারিধারায় ‘অটো কার সিলেকশন’ নামে একটি গাড়ির শোরুম চালু করেন। সেখানেও তিনি অবৈধ পথে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করতেন। তার নিজের ব্যবহৃত ৫টি বিলসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। দুটি তার নিজ বাসা থেকে এবং ৩টি তার গাড়ির শোরুম থেকে। ৫টি গাড়িই অনুমোদন ছাড়া তিনি দেশে এনেছিলেন।

 

র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দল ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে ৯০ দশক থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। তিনি বিএনপির একজন ডোনার ছিলেন। দলকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন বলেও তথ্য রয়েছে।

 

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কার্যালয়ে গোল্ডেন মনিরের ছিলো খুব প্রভাব। সেখানে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে রাজধানী ও তার আশাপাশের এলাকার বিভিন্ন জমি দখল করেছেন। রাজউকের একজন সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার তথ্যও রয়েছে। তার সহযোগিতায় মনির রাজউক কার্যালয়ে নিজের অফিস হিসেবে একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ওই রুম অফিস হিসেবে ব্যবহারও করেছেন। এছাড়া রাজউকের সিল জালিয়াতি করে একটি জমির দলিল নিজের নামে করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে রাজউক তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেছিল।

 

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মনির গাউসিয়ার একটি কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন। এরপর তিনি ক্রোকারিজ ব্যবসা শুরু করেন। তারপর স্বর্ণের দোকান স্বর্ণ চোরাচালানী ও অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা করে আসছিলেন। স্বর্ণ চোরাচালানের কারণে ধীরে ধীরে তার নাম হয়ে ওঠে ‘গোল্ডেন মনির’।

 

তিনি বলেন, আটক গোল্ডেন মনির রাজউকের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিপুল সংখ্যক বাড়ি ও প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মনির ৩০টি স্থানে প্লট ও বাড়ির কথা স্বীকার করেছেন। তবে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, তার ২ শতাধিক প্লট ও জমি রয়েছে।

 

এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। একটি দুদকে এবং অপরটি রাজউকের সিল জালিয়াতি দায়ে। আমরা তার সম্পদের সঠিক তথ্য জানতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও এনবিআরের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করবো। সেই সঙ্গে অবৈধ গাড়ির বিষয়ে বিআরটিএর তথ্য চেয়ে আবেদন করবো।

 

২১ নভেম্বর ২০২০
সূত্র: সময় সংবাদ

আরো পড়ুন

বৈধ পথে ইতালি যাওয়ার পথ খুলছে বাংলাদেশিদের

ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমলো

Hard to mortgage properties! 🏠