ঝাল-মশলাযুক্ত খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেন। এই এলাকায় গড়ে উঠেছে ভারতীয় খাবারের অসংখ্য রেস্তোরাঁ যা স্থানীয় লোকজনের মুখে ‘কারি রেস্টুরেন্ট’ নামেই বেশি পরিচিত, আর এই রেস্তোরাঁগুলো মূলত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু নতুন একটি প্রতিবেদন বলছে, গত ১৫ বছর ধরে এধরনের রেস্তোরাঁর সংখ্যা কমতির দিকে।
ব্রিক লেনের রেস্তোরাঁ ও খুচরা দোকানগুলোকে নিয়ে চালানো দু’বছরের একটি গবেষণার অংশ হিসেবে ‘বিয়ন্ড বাংলাটাউন’ নামে এক প্রতিবেদনে এই এলাকার কারি হাউজগুলোর পেছনে বাংলাদেশিদের অনন্য অবদান তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি গত ১৫ বছর ধরে এলাকাটির দ্রুত বদলে যাওয়া এবং রাজধানী লন্ডনে নতুন ব্যবসায়ের প্রভাব বিশ্লেষণ সংক্রান্ত।
ষাটের দশক থেকে শুরু করে ক্রমেই এলাকাটি বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। কিন্তু রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এই সম্প্রদায়ের পরবর্তী প্রজন্ম একই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে না। এই এলাকার কারি রেস্তোরাঁর সংখ্যা গত ১৫ বছরে কমেছে ৬২%। একুশ শতাব্দির ১ম দশকের মাঝামাঝিতে এখানে ৬০টি রেস্তোরাঁ থাকলেও ২০২০ সালের শুরুতে রয়েছে মাত্র ২৩টি।
জানা যায়, ব্রিক লেনে হিপস্টার ক্যাফে, ভিনটেজ কাপড়ের দোকান, সুস্বাদু খাবার এবং বুটিকের ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠছে, এদিকে লড়াই করতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের দ্বারা চালিত রেস্তোরাঁগুলোকে।
ব্রিক লেনে ২১ বছর ধরে রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দ্য মুনসুনের শামস উদ্দিন জানান, এই এলাকার কারি হাউজগুলো কিছু সময় ধরে কমতির দিকে। আগে দেখা যেত রবিবারে প্রায় ৯০ থেকে ১১০ জন আসত আমাদের রেস্তোরাঁয়। গত রবিবার এসেছে মাত্র ১৩ জন। আর সোমবার বিকেল ৫টা অবধি কোনো কাস্টমার পাইনি আমরা। এখন এমনটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের ব্যবসা।
তিনি বলেন, ‘প্রধানত অফিসকর্মী ও পর্যটকদের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রসিদ্ধ বাংলাটাউন যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কিন্তু এখন অফিসকর্মী ও পর্যটকরা না থাকায় লড়াই করতে হচ্ছে আমাদেরকে। প্রতি গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লোকজন এখানে আসত। কিন্তু এবার একজনও পর্যটক দেখিনি’।
শামস জানান, প্যানডেমিকের আগেও নাকি ব্যবসার ধীরগতি ছিল এবং তিনি ভবিষ্যত নিয়েও শংকিত। লন্ডনের এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
প্যানডেমিকের আগে বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে সুপারমার্কেটগুলোর সস্তা অফার দায়ী বলে মনে করছেন তিনি। সরকারের ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’ পরিকল্পনাও তাকে তেমন লাভবান করবে না, কারণ কাস্টমারের সংখ্যা খুবই কম এবং এদের অনেক অংশই পর্যটক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শামস উদ্দিনের মতো একই রকম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিক লেনের আরও অনেক বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। রেস্তোরাঁগুলোকে বাঁচাতে এবং বিকশিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদকদের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারি সহায়তা, রেস্তোরাঁগুলোর জন্য বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ব্রিক লেন ও লন্ডনের ইতিহাসে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি। এইলক্ষ্যে তারা একটি শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে মানুষ বাংলাটাউনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে।
সূত্র: মেট্রো ইউকে
রূপান্তর: নওশাদ
৫ আগস্ট ২০২০