জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে বিল ক্লিনটন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’-এর ওই আয়োজনে ড. ইউনূস বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে তরুণদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মঞ্চে ডাকেন।
ড. ইউনূসের আহ্বানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং তার বিশেষ সহকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি এবং আরও একজন তরুণ মঞ্চে ওঠেন। প্রথম দুইজন তার সফরসঙ্গী হলেও, তৃতীয় ব্যক্তির নাম তালিকায় ছিল না।
অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার হয়, ফলে তৃতীয় ওই তরুণের পরিচয় এবং মঞ্চে উঠা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। সমালোচনায় প্রশ্ন করা হয়, এই তরুণ কীভাবে আন্দোলনের একজন!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে অনেকেই ওই তরুণকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেন। এমনকি, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তাকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ।
পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ওই তরুণের নাম জাহিন রোহান রাজিন এবং হাইড্রোকো প্লাস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তবে, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনা চলতে থাকা অবস্থায়, ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী মাহফুজ আলম বুধবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে ওই তৃতীয় তরুণকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
মাহফুজ আলম পোস্টে লিখেছেন: “সিজিআই ইভেন্টের ওই ব্যক্তি ছিলেন একজন অনুপ্রবেশকারী এবং প্রতারণামূলক উদ্দেশ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমি তার এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি নিজস্ব উদ্যোগে ইভেন্টে অংশ নেন এবং আমরা যারা প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলাম, তার উপস্থিতি কিংবা উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তিনি আমাদের কারো সাথেই যোগাযোগ করেননি।
যখন স্যার আমাদের মঞ্চে ডাকেন, তিনি দ্রুত উঠে আমাদের আগেই মঞ্চের দিকে ছুটে যান। যদিও তার প্রতি সন্দেহ ছিল, আমি তাকে মঞ্চে উঠতে বাধা দিতে পারিনি। তবে বিশ্বনেতা ও বিশিষ্টজনদের মাঝে আমি অসহায় ছিলাম। মনে হচ্ছে, এটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত ধ্বংসাত্মক কাজ ছিল।
এই ঘটনার জন্য আমি আন্দোলনের নেতাকর্মী, সমন্বয়কারী এবং গণজাগরণের যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি তাকে প্রতিহত করতে পারিনি এবং তার এই বিশ্বাসঘাতকতার কাজ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা ভবিষ্যতে গণজাগরণের প্রতিনিধিত্ব আরও সতর্কতার সাথে করবো এবং এই ধরনের অনুপ্রবেশকারী ও ৫ আগস্টের বিপ্লবের ষড়যন্ত্রকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনব।”
এম.কে
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪