যুক্তরাজ্যে কারাগারের ভিড় কমানো এবং পুনরায় অপরাধ করার হার হ্রাস করতে খোলা কারাগারের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের সাজা পর্যালোচনা বিভাগের প্রধান।
ডেভিড গক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টাইমস-কে বলেন, “আমাদের কারাগারে জায়গা শেষ হয়ে গিয়েছে এবং বন্দিদের যদি দিনে পড়াশোনা ও কাজ করার জন্য কারাগার থেকে বের হওয়ার আরও সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে এই ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।”
সাবেক কনজারভেটিভ বিচারমন্ত্রী গককে লেবার সরকার সাজা পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য কারাগারের ভিড় কমানো।
সাবেক মন্ত্রী ডেভিড গকের এই মন্তব্য স্পেনে তিনটি কারাগার পরিদর্শনের পর এসেছে, যেখানে সংস্কারের ফলে ২৫% বন্দিকে খোলা কারাগারে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, এই নীতি অর্থ সাশ্রয় করে এবং বন্দিদের মুক্তির জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে, যার ফলে তারা পুনরায় অপরাধ করার সম্ভাবনা কমে।
গক ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত তেরেসা মের মন্ত্রিসভায় বিচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ডেভিড গককে সরকার সাজা পর্যালোচনার দায়িত্ব দেয়, যা ছোট মেয়াদের সাজা বাতিল করা এবং কারাগারের বিকল্প হিসেবে কমিউনিটি অর্ডার কঠোর করার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
লেবার পার্টির ইশতেহারের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এছাড়া, দলটি প্রিজন রিফর্ম ট্রাস্টের প্রধান লর্ড টিম্পসনকে কারাগার বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
গক টাইমস-কে আরো বলেন, ” আমরা দীর্ঘ মেয়াদের সাজা দেওয়ার পথে অনেক বেশি এগিয়ে গেছি, যা অপরাধ কমাতে কিছুই করছে না। বরং এটি বড় ধরনের ব্যয়ের কারণ হচ্ছে।
উন্মুক্ত কারাগার ব্যবস্থা অপরাধের প্রতি নমনীয় হওয়ার বিষয় নয় বরং অপরাধ কার্যকরভাবে কমানোর একটি উপায়।”
সরকার ইতোমধ্যে জরুরি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৫,৫০০ বন্দিকে আগেভাগে মুক্তি দিয়েছে যাতে কারাগারে জায়গা খালি করা যায় এবং বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া আরও বেশি অ-কারাগারমুখী সাজা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সাজা পর্যালোচনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এই নীতি ১৮ মাস পর পর্যালোচনা করা হবে।
বর্তমানে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের কারাগারে ৮৫,৮৭৭ জন বন্দি রয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিচার মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে কারাগারের বর্তমান কার্যক্ষম ধারণক্ষমতা ৮৮,৬৮৮ জন।
বিচার মন্ত্রণালয় ২০৩১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে মোট ১৪,০০০ কারাগার কক্ষের জায়গা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর মধ্যে ৬,৪০০ নতুন নির্মিত কারাগারে থাকবে, যার জন্য আগামী দুই বছরে ২.৩ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করা হবে।
তবে ডিসেম্বরে বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বিবিসি রেডিও ৪-এ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শুধু নতুন কারাগার নির্মাণ করেই কারাগারের ভিড় সমস্যার সমাধান হবে না।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
“আমরা জায়গার ঘাটতিতে পড়ব কারণ নতুন সরবরাহের এই বৃদ্ধি কারাগারের চাহিদার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। চাহিদা এমনভাবে বাড়ছে, যা কোনো সরবরাহই পূরণ করতে পারবে না।”
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্য ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠান সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে কারাগার তাদের পরিকল্পনা লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪