গাজা ধ্বংসের হুমকি ও পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার দায়ে ইসরায়েলের দুই কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোত্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই দুই মন্ত্রী এখন থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং তাদের যেকোনো সম্পদ ও অর্থনৈতিক লেনদেন ফ্রিজ করা হবে।
এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে। এতে বলা হয়, “আমরা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি অটল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য ও সহিংস কার্যক্রম এই সমাধানকে চরমভাবে বিপন্ন করছে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, বেন-গভির সম্প্রতি জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে অনধিকার প্রবেশ করেন এবং সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় গড়ার আহ্বান জানান। অন্যদিকে, স্মোত্রিচ একাধিকবার প্রকাশ্যে গাজা সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “সেখানে এক কণাও গম প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।” তিনি এমনকি দাবি করেছিলেন যে, গাজায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুও “ন্যায্য ও নৈতিক”।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গত মাসেই এই মন্তব্যগুলোকে “অমানবিক ও জঘন্য” হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন, তবে তখন তিনি সরাসরি নিষেধাজ্ঞার পথে যাননি। এবার আন্তর্জাতিক সমর্থন সুনিশ্চিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইসরায়েলি সরকার এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’আর এক বিবৃতিতে বলেন, “নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ নিন্দনীয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো।”
নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো যখন ইসরায়েলের গাজা অভিযানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ আলোচনাও স্থগিত করেছে এবং কিছু উগ্র বসতি স্থাপনকারী নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বেন-গভির ও স্মোত্রিচের মতো উগ্র ডানপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে এমন আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ইসরায়েল সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এই নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয়নি, যা এ কূটনৈতিক উদ্যোগের ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা বিশ্ব এখন একযোগে গাজায় যুদ্ধবিরতি, বন্দিমুক্তি, মানবিক সাহায্য ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ পুনরুজ্জীবনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা তারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ জুন ২০২৫