9.5 C
London
December 25, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়, ট্রাম্পের জবাবে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী

পানামা খাল দখলের হুমকির পর ডেনমার্কের মালিকানাধীন দ্বীপ ভূখণ্ড গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলেছিলেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন বললেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডের জনগণের।’

গত রোববার পেপালের সহপ্রতিষ্ঠাতা কেন হাওয়ারিকে ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন ট্রাম্প। এরপর গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের প্রত্যুত্তরে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তা প্রকাশিত হয়।

নিজের সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ একটি অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা।’

তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেডে। তিনি বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড আমাদের। আমরা বিক্রির জন্য নই এবং কখনো বিক্রির জন্য হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতার সংগ্রাম হারাতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সারা বিশ্ব, বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং বাণিজ্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।’

এই প্রথমবার নয় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। এর আগেও, তিনি একবার এই ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ট্রাম্প তার প্রথম প্রশাসনের সময় বলেছিলেন যে, তিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। পরে তার মন্তব্যের জেরে ড্যানিশ কর্মকর্তারা বলেন, তাদের রাষ্ট্রের অংশ এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বিক্রির জন্য নয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসন তখন এ ধারণাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেন। পাল্টা জবাবে ট্রাম্প ডেনমার্কে তার রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেন।

উল্লেখ্য, ১৮৬৭ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছে বা বিষয়টি বিবেচনা করেছে। গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অংশ, তবে এর ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি ডেনমার্কের মাধ্যমে ইইউ ব্লকের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ওভারসিজ টেরিটরি হিসেবে ইউরোপীয় তহবিল পেয়ে থাকে।

গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অংশ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি পিটুফিক স্পেস বেস অবস্থিত। ১৯৫১ সালে ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুসারে এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়।

গ্রিনল্যান্ড মূলত আর্কটিকের অংশ। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। সেখানে সম্পদের জন্য বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিনল্যান্ডের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন পর্যন্ত অঞ্চল দাবি করার চেষ্টা করেছে। গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে সোনা, রুপা, তামা ও ইউরেনিয়াম এবং এই অঞ্চলের পানিতে তেলের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে, পানামার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনী এবং বাণিজ্যিক জাহাজ বহরের সঙ্গে অত্যন্ত অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। পানামা যা ফি নিচ্ছে তা হাস্যকর। আমাদের দেশের সঙ্গে এই জালিয়াতি অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে পানামা খাল নির্মিত হয় এবং এর আশপাশের এলাকায় কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অধীনে ছিল। তবে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং পানামার মধ্যে একটি যৌথ চুক্তির পর পানামাকে পুরোপুরিভাবেই খালটির নিয়ন্ত্রণ প্রদান করা হয়।

ট্রাম্প তার পোস্টে পানামা খাল এবং এর আশপাশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই খালটি কেবল পানামার ব্যবস্থাপনার জন্যই ছিল, চীন বা অন্য কারও জন্য নয়। আমরা কখনোই এটি ভুল হাতে পড়তে দেব না!’

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে ডেমোক্র্যাট শিবিরে কালোমেঘ

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে ২৬টি মসজিদ

মালদ্বীপে ইসরাইলিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ