12.6 C
London
December 18, 2024
TV3 BANGLA
প্রবাসে বাংলাদেশ

গ্রিসের কৃষি খামারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাসজীবন

‘লাল সোনা’ খ্যাত স্ট্রবেরি খামারে ঠিক কত বাংলাদেশি কাজ করেন তার সঠিক কোনো হিসাব নেই৷ কিন্তু গ্রিস জুড়ে, বিশেষ করে রাজধানী এথেন্স থেকে প্রায় তিনশ কিলোমিটার দূরে কয়েকটি গ্রামে স্ট্রবেরি মৌসুমে অন্তত ১০ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন বলে ধারণা করা হয়৷

বৈধ কাগজ নেই, তাই চাইলেই সরকার নির্ধারিত কাজ করতে পারেন না অভিবাসী শ্রমিকেরা৷ এই সুযোগ কাজে লাগান গ্রিসের কৃষি খামারের মালিকেরা৷ মধ্যসত্বভোগী মাস্তুরাদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা দিন দিন আরো বেড়ে চলেছে বলে গণমাধ্যমের এক খবরে জানা যায়৷

গ্রিসে উৎপাদিত স্ট্রবেরি ফলন খুবই ভালো হয়৷ প্রতিবছরই আগের বছরের চেয়ে উৎপাদনে হয় রেকর্ড পরিমান৷ এমনকি করোনা মহামারিতে যখন পর্যটন থেকে শুরু করে অন্য সকল খাত বিপর্যস্ত, তখনও গ্রিসে স্ট্রবেরি খামার দেখেছে বিপুল লাভের মুখ৷

 

 

 

 

গ্রিক অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অব ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড জুসেস এর সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালেও আগের বছরের তুলনায় স্ট্রবেরি উৎপদান বেড়েছে প্রায় আট দশমিক দুই শতাংশ৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসে স্ট্রবেরি উৎপাদন হয়েছে ৭০ হাজার ৩১৯ টন, যা আগের বছর ছিল ৬৪ হাজার ৯৬২ টন৷

কিন্তু এ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি যে অভিবাসী শ্রমিক, তাদের ভাগ্যে উন্নয়ন তো ঘটেইনি বরং হতাশা ও অনিশ্চয়তা আরো বেড়েই চলেছে৷

১৫-১৬ বছর আগেও গ্রিসের স্ট্রবেরি খামারের শ্রমিকরা আসতেন মূলত পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন আলবেনিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিশর থেকে৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইরান-তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশিরা বিপুল সংখ্যায় গ্রিসে আসতে শুরু করেন৷ পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে আসা শ্রমিকদের তুলনায় এই অনিবন্ধিত, কাগজপত্রবিহীন শ্রমিকদের বেতন কম দিতে হয়৷ ফলে এখন এসব খামারে বাংলাদেশিদেরই আধিক্য৷

 

 

 

 

মহাদেশীয় ইউরোপের শ্রমিকদের যেখানে সাত-আট ঘণ্টার এক কর্মদিবসে ৩৫-৪০ ইউরো (চার হাজার টাকা) দিতে হতো, বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সেটি ১২ ঘণ্টায় ২৫-৩০ ইউরোতে (তিন হাজার টাকা) নেমে এসেছে৷

তবে এই ৩০ ইউরোর পুরোটাও আসে না শ্রমিকদের পকেটে৷ শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা খুবই নাজুক। তাছাড়া শ্রমিকদের বেতন হতে নির্ধারিত হারে টাকা কমিশন হিসেবে কেটে রাখেন মধ্যসত্বভোগী দালালেরা। গ্রিসের এই কৃষিখামার গুলোতে শ্রমিক সরবরাহের জন্য মালিকেরা নির্ভর করেন গ্রিক ভাষা জানা মধ্যসত্বভোগী মাস্তুরাদের ওপর৷ এই মাস্তুরারা নিজেরাও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী৷ তবে দীর্ঘদিন গ্রিসে থেকে কৃষিব্যবসা সম্পর্কে এরা ধারণা লাভ করেছেন, জানেন গ্রিক ভাষাও৷ ফলে শ্রমিকদের কাজ পাওয়া না পাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে এই মাস্তুরাদের ওপর৷ তাই মাস্তুরাদের কথার বাইরে যেতে পারেন না অভিবাসী বাংলাদেশিরা। এভাবেই দাসজীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রিসে বসবাস করা বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।

 

এম.কে
২৮ মে ২০২৩

 

আরো পড়ুন

ফ্রি ভিসার খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা ফিরছেন নিঃস্ব হয়ে

শীর্ষ ১০ উদীয়মান বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশি তরুণী তনিমা

দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মানবপাচার করছে বাংলাদেশি চক্র