ঢাকার নগরজীবনে গ্রাফিটি সুবোধ এক অনন্য সাংস্কৃতিক প্রতীক। ২০১৭ সালে প্রথমবার আগারগাঁওয়ের একটি দেয়ালে সুবোধের উপস্থিতি আলোচনার জন্ম দেয়। সেই গ্রাফিটিতে লেখা ছিল— “সুবোধ তুই পালিয়ে যা”। সামাজিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা আর হতাশার প্রেক্ষাপটে এই বার্তাটি অনেকের কাছে তখনকার সময়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সুবোধের ভাষাও বদলেছে। সাম্প্রতিক গ্রাফিটিতে সুবোধ আর পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে না, বরং ভালোবাসা, শিল্প ও মানবিকতার ডাক নিয়ে হাজির হয়। নতুন চিত্রে দেখা যায়, সুবোধ এক কিশোরের মাথায় টুপি পরিয়ে দিচ্ছে—যেন সে নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব, স্বপ্ন আর সৃষ্টিশীলতার ভার তুলে দিচ্ছে। এই রূপান্তর সুবোধকে কেবল প্রতিবাদের নয়, আশার প্রতীকে পরিণত করেছে।
২০২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রো স্টেশনের পাশের দেয়ালে সুবোধ আবার দেখা দেয়, তবে ভিন্ন ভঙ্গিতে। সেখানে সে ছিল প্রতিবাদকারীর ভূমিকায়—সময়ের অন্যায়, অসঙ্গতি আর নীরব চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক চরিত্র। এই গ্রাফিটি দেখিয়ে দেয়, সুবোধ কেবল নান্দনিক শিল্পকর্ম নয়; বরং সমসাময়িক বাস্তবতার সঙ্গে সংলাপে থাকা এক সামাজিক ভাষ্য।
সুবোধের গ্রাফিটিগুলোর মূল সুর ঘৃণা নয়, ভালোবাসা। বিভাজন বা সহিংসতার পরিবর্তে মানবিকতা, সাহস ও সম্মিলিত চেতনাকে সামনে আনা এই শিল্পের কেন্দ্রীয় বার্তা। দেয়ালে আঁকা এই চরিত্র যেন মানুষকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়—ভয়কে নয়, আশাকে বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
এই গ্রাফিটির শিল্পীর পরিচয় আজও অজানা। তবুও সুবোধ বারবার ফিরে আসে সময়ের প্রয়োজনে। নগরের দেয়ালকে ক্যানভাস বানিয়ে সে কথা বলে রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে। সুবোধ এখন আর শুধু একটি গ্রাফিটি নয়; এটি ঢাকার নাগরিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে এক নীরব অথচ শক্তিশালী ভাষ্য।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে

