TV3 BANGLA
শীর্ষ খবরসারাদেশ

চট্টগ্রাম কারাগারে ১৩ মিনিটে বন্দী পালানোর ঘটনায় প্রশ্ন!

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দী ফরহাদ পালানোর ঘটনায় কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, তিনি পালানোর আধা ঘণ্টা পর পর্যন্ত বিষয়টি টের পায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। এই সময়ের বাইরে ওই বন্দী বিশেষ ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে আরেকটি ভবনের চারতলা পর্যন্ত যেতে সময় নিয়েছেন ১৩ মিনিট। তখনো বিষয়টি কারও নজরে আসেনি। এর আগে খুন ও রহস্যময় মৃত্যুসহ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এই কারাগারে। এরপরও সতর্ক না হয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢিলেঢালা রাখারই অভিযোগ উঠছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

 

শনিবার (৬ মার্চ) ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বের হন হত্যা মামলার আসামি ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেল।

 

ওই হাজতি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছে কারাগার কর্তৃপক্ষ।

 

এই ঘটনায় দুইজন কারা কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারা বিভাগ।

 

অবশেষে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) ফরহাদকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

কারাবন্দী পালানোর ঘটনাটিকে কাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফলতি হিসেবে চিহ্নিত করেন অনেকে। অনেকে এই কারাগারের পূর্ব ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেন। কারণ এর আগেও এই কারাগারের কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গাফলতির অভিযোগ এসেছে।

ফেসবুকের পাবলিক পোস্টে কয়েকজন মন্তব্যকারী

প্রথম আলোর তথ্য মতে, এর আগে ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে ও জাল জামিননামার মাধ্যমে তিন বন্দী চম্পট দেন। আর দুজন কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টাকালে ধরা পড়েন। কারাগারের ভেতরে রহস্যময় তিন মৃত্যুর পেছনে কারা জড়িত, তা–ও অজানা রয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে গলায় ব্লেড চালিয়ে যুবলীগ নেতা বলে পরিচিত মো. আলম, ২০০০ সালে ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবী হত্যা মামলার আসামি ওসমান ছুরিকাঘাতে ও ২০১৯ সালে সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী ইটের আঘাতে নিহত হন।

 

আলমের বড় ভাই মো. জাকির বলেন, ব্লেডটি কারাগারে ভেতর কীভাবে গেল? কারা সুযোগটি করে দিয়েছিল, তারা আজও চিহ্নিত হয়নি। এ ছাড়া এই কারাগারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ১ মার্চ রুপম কান্তি নাথ নামের এক বন্দীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীকে কারাগারে বৈদ্যুতিক শকসহ নানা নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, কারাধ্যক্ষসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতে মামলার আবেদনও করেন।

 

অবশ্য বন্দী পালানোর ঘটনার পরদিন চট্টগ্রাম কারাগারের কারাধ্যক্ষ (জেলার) রফিকুল ইসলাম ও উপকারাধ্যক্ষকে (ডেপুটি জেলার) আবু সাদ্দাতকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন ও মো. ইউনুসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই দুই কারারক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কিছু বলতে রাজি হননি।

 

তদন্ত কমিটির প্রধান ও খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন মো. ছগির মিয়া বলেন, কারারক্ষী তালা খুলে না দিলে বন্দী পালানোর সুযোগ পেতেন না। তা ছাড়া নির্মাণাধীন ওই ভবনে ওঠার সিঁড়ির মুখে পাহারা থাকলেও পালাতে পারতেন না। তদন্ত শেষে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, ঢিলেঢালা নিরাপত্তাকে জোরদার করার সুপারিশ করা হবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে।

 

 

সাধারণত কারাগারে দুর্ধর্ষ বন্দীদের কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। অন্য বন্দীরা (জঙ্গি ছাড়া) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেলেও দুটি ওয়ার্ডের বন্দীরা সে সুযোগ পান না। তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। দিনরাত তালাবদ্ধ থাকে দুটি ওয়ার্ড।

 

কারা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাত হাজার বন্দী রয়েছেন। ধারণক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৮৫৩ বন্দীর। এর মধ্যে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ ২০০ বন্দী রয়েছেন।

 

সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বপরায়ণ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগে প্রাধান্য না দেওয়ার কারণে কারাগারে অনিয়ম ঘটছে বলে মনে করেন কারা অধিদপ্তরের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। তিনি বলেন, যারা টাকা দিয়ে আসেন, তারা এগুলো তোলায় ব্যস্ত থাকে। কার, কী দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছেন, তদারকির সময় থাকে না। এতে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকে। চট্টগ্রামের মতো বড় কারাগারে খুন, বন্দী পালানোর ঘটনা বিস্ময়কর। এসব ঘটনার জন্য যাঁরা দায়ী, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

১১ মার্চ ২০২১
সূত্র: প্রথম আলো

আরো পড়ুন

সমারসেটে প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পরার এক বছর

নিউজ ডেস্ক

প্রতিবন্ধী বেশি রাজশাহীতে, কম সিলেটে

কেয়ার ওয়ার্কার ভিসা প্রত্যাশীদের ব্যাপারে আসছে নতুন সিদ্ধান্ত