দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে আছে। দেশটির বেশির ভাগ বৈদেশিক ঋণই চীনের কাছ থেকে নেওয়া। তবে দেশটিকে ঋণের এই সংকট কাটাতে সহায়তার দাবি করেছে প্রতিবেশী চীন। লাওস বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বেইজিংয়ের তরফ থেকে এ ঘোষণা এল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গত মঙ্গলবার এ কথা জানান। তিনি বলেন, বেইজিং প্রতিবেশী লাওসকে বিশাল ঋণের ভার থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সহায়তা করে যাচ্ছে। ওই মুখপাত্র বলেছেন, বেইজিং লাওসসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দৃঢ় সমর্থনসহ ‘পারস্পরিকভাবে উপকারী সহযোগিতা’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘একই সময়ে একই সঙ্গে আমরা (বেইজিং) সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ঋণভার লাঘবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
লাওসের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক ঋণদাতা দেশ চীন। লাওসের সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের অর্ধেকই চীনের কাছ থেকে নেওয়া। গত বছরের শেষ নাগাদ ছোট এই দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১০৮ শতাংশ।
কমিউনিস্ট শাসিত লাওস সম্প্রতি চীনের সঙ্গে একটি উচ্চগতির রেললাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এই সংযোগ লাওসকে চীনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করলেও দেশটির ঋণের বৃদ্ধি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
গত বছর লাওসের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৯৫ কোটি ডলারে পৌঁছায়। তবে এই সময়ে দেশটি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে ৬৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংক অতীতে বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। তবে এই উদ্যোগ কতটা কাজে দেবে তা দেখার বিষয়।
লাওসের বৈদেশিক ঋণের এই সমস্যা এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চীনা প্রভাব রুখতে আলাদা অর্থনৈতিক সহায়তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ওয়াশিংটন অধিকাংশ সময়ই চীনা ঋণকে একটি ফাঁদ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অবশ্য এর নজিরও আছে। সম্প্রতি চীনা ঋণের ভারে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দেশ খাবি খেয়েছে।
সর্বশেষ, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ শূন্য হয়ে যাওয়ার পর দেশটি দেউলিয়া হয়ে যায়। গত মাসে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপদেশ ঘোষণা দেয় যে, তারা চীনের কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই ঋণ দেবে কলম্বোকে।
অবশ্য চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসব ঋণকে ‘ঋণের ফাঁদ কূটনৈতিক কার্যক্রম’ বলার মার্কিন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের প্রচেষ্টা মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সহযোগিতার সম্পর্কে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র)এসব বলার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশকেই ধোঁকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
সূত্রঃ ব্লুমবার্গ
এম.কে
০৫ জুলাই ২০২৪